নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ) : প্রথমে ক্লাস্টার পরে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রাচ্যের ড্যান্ডি ও শিল্পাঞ্চল খ্যাত জেলা নারায়ণগঞ্জকে। তারপরেও সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে দিন দিন বেড়ে চলছে মৃত্যু সহ করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আইনশৃঙ্খলা আহিনী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা হাজারো চেষ্টা করলেও কিছু মানুষের যেন, ঘর থেবে বের হওয়াটা বেহায়াপনা স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
তাই, শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনতিবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারফিউ জারির নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদেন জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে সামাজিক সংগঠন স্লোগান- সোনার বাংলা গড়তে হলে, সোনার মানুষ হই এর পক্ষে সাফায়েত আলম সানি। এই বিবৃতিতে কারফিউ কালীন সময়ে ত্রাণ সমন্বয়সহ অন্যান্য বিষয়ের একটি রূপরেখাও দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আজ বাংলাদেশে করোনা বির্পযয়ের মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট আবেদন, অনতিবিলম্বে নারায়ণগঞ্জে কারফিউ জারি করা হউক। প্রধানমন্ত্রী করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষে আপনি বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমাদের কোভিড- ১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ না করতে পারলে, ব্যবসা বাণিজ্য সচল রাখা সম্ভব না। অতএব সংক্রমণ প্রতিরোধ না করে এই প্রণোদনা কার্যকর করাও সম্ভব না। অর্থাৎ এই লক ডাউন দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকবে, এবং অর্থনীতিও দিনকে দিন বিপর্যস্ত হতে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, আমরা যদি ১ থেকে ২১ দিন নিজেদের সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি তাহলে পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ । এখানে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। তাই জাতীয় পর্যায়ে ফান্ড গঠন করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা একত্রিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে শিল্পমালিকদের, কারণ প্রতিরোধ না করা গেলে দেশের অর্থনীতি তথা সকল শিল্পে ধস নামবে, যা থেকে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানই রক্ষা পাবেনা। এছাড়া সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন কর্তন করা যেতে পারে। তাই অনতিবিলম্বে ২১ দিনের খাবার সরবরাহ করে, কারফিউ জারি করা ছাড়া অন্য কোন পথ আমারা দেখতে পাচ্ছি না।
নারায়ণগঞ্জ ৫ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এর মধ্যে রুপগঞ্জে ৭টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। আড়াইহাজারে ১০টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। সোনারগাঁ ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বন্দর ও নারায়ণগঞ্জ মিলে ১২টি ইউনিয়ন ও ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত এবং ধারণা করা হয় বিভিন্ন জেলার কর্মজীবি মানুষের অবস্থানের ভিত্তিতে এতদ অঞ্চলে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বসবাস।
যদি নারায়ণগঞ্জে ৬০ লক্ষ মানুষের বসবাস হয়। তাহলে ধরে নেই ২৮ লক্ষ মানুষ হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত। তাদের এই ক্রান্তিলগ্নে সংসার চালানো কষ্ট সাধ্য। যদি ধরি, গড়ে একেকটি পরিবারে ৪ জন করে সদস্য তাহলে মোট পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লক্ষ পরিবার।
৭ লক্ষ পরিবারের ২১ দিনের খসড়া খাবার বাজেট হচ্ছে। আনুমানিক (২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা) তাহলে মোট অর্থের সম্ভাব্য পরিমান দাঁড়ায় দুইশত দশ কোটি টাকা এবং এই সব খাদ্যদ্রব্য বিতরনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করে, প্রয়োজনে গ্রাম ও মহল্লা ভিত্তিক কমিটি করা যেতে পারে। ঔষধ, চিকিৎসা ও জরুরী সেবা দানের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ড ভিত্তিক কল সেন্টার চালু করার মাধ্যমে সেবা প্রদাণ করা যেতে পারে।
নারায়ণগঞ্জে মোট ৩৯টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভা। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৯টি করে ওয়ার্ড থাকে তার মানে (৩৯+৫*৯)= ৩৯৬টি ওয়ার্ড ও সিটি কর্পোরেশন-এর ২৭টি ওয়ার্ড মিলে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪২৩টি। প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন মেম্বার সমন্বয়ে ওয়ার্ড গুলোতে কাউন্সিলরকে প্রধান করে এবং ইউনিয়নে মেম্বারকে প্রধান করে ১১ জনের স্বেচ্ছাসেবক দল অত্র এলাকায় সেবা প্রদান করবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উক্ত ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন নাম্বার টাঙিয়ে দেয়া হবে। কোন ব্যক্তির চিকিৎসা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা প্রয়োজন হলে উক্ত নাম্বারগুলোতে প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করবে। তখন উক্ত প্রতিনিধি তার কাউন্সিলরকে বা ইউপি মেম্বারকে জানালে কাউন্সিলর বা ইউপি মেম্বার জেলা প্রশাসক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকের মোট সংখ্যা হবে ৪৬৫৩ জন। যারা শুধু চিকিৎসা, ঔষধ, এ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত বিষয়াদি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সমন্বয় করবেন।
যেহেতু ২১ দিনের কারফিউ একটি ব্যয় সাধ্য প্রক্রিয়া তাই সরকারি তহবিল এবং বেসরকারি অনুদানের সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। নারায়ণগঞ্জ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তাই অনেক বিত্তশালী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ রক্ষার স্বার্থে অবশ্যই এগিয়ে আসবে।
নারায়নগঞ্জ এর মাননীয় সংসদ সদস্যগণের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি আপনারা বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুততম সময়ে উপস্থাপন এবং বাস্তবায়ন করে দেশ ও জাতীর স্বার্থে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন।
জনস্বার্থে : স্লোগান- সোনার বাংলা গড়তে হলে, সোনার মানুষ হই