প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিল ব্যবহার করতেন তারা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ছিলেন হত্যা মামলার আসামি। এক পর্যায়ে নিজেকে বানিয়ে ফেলেন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটের চেয়ারম্যান। এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ (৫৩)। এ কাজে তার স্ত্রী দৌলেতুন নেছাও (৪২) সম্পৃক্ত। প্রতারণা করতে গিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীলসহ নানা সীল ও কাগজ ব্যবহার করতেন। অবশেষে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বুধবার (১১ মার্চ) রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর হাউজিং এলাকা থেকে র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় র‌্যাব তাদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সিলসহ মোট ৪২টি ভুয়া সিল ও বিপুল পরিমাণ জাল, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নথিপত্র ও চাকু উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন এ তথ্য জানান।

তিনি আরও জানান, জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ ১৯৮২ সালে বরগুনার পাথরঘাটা কেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ২০০৭ সালে বরগুনার পাথরঘাটার চ্যাঞ্চল্যকর দেবরঞ্জন কীর্তনীয়া হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি। সেই হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পালিয়ে ঢাকায় এসে হারুন-অর-রশিদ থেকে জিয়াউল আমিন নাম ধারণ করেন। এরপর কিছু উকিলের সঙ্গে কোর্টে কাজ করার সুবাদে আইনি কিছু বিষয় রপ্ত করে ২০১১ সালে ‘জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি’ নামে একটি এনজিও সংগঠন শুরু করেন। এই এনজিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রতারিত করায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে এর লাইসেন্স বাতিল করে দেয়।

আলেপ উদ্দিন আরও জানান, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় তার সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল করলেও জিয়াউল আমিন মানবাধিকার ইউনিটির নামে তার প্রতারণার কাজ অব্যাহত রাখে। এসএসসি পাস জিয়াউল আমিন একাধারে মানবাধিকার ইউনিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের চিফ কো-অর্ডিনেটর ও হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে আসছেন। এছাড়াও মানবাধিকার ইউনিটি নামক অবৈধ সংস্থার চেয়ারম্যানের ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে ছদ্মবেশ ধারন করেন। তিনি বেকার যুব সমাজকে চাকরির প্রলোভন, জায়গা জমি ও বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা মেটানোর নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করেন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

জিয়াউল আমিন এই জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি কমিটি তৈরি করে প্রায় দুই হাজার কর্মী নিয়োগ করে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা সদস্য ফি গ্রহণ করেন। জিয়াউল আমিনের প্রধান কাজ সরকারি বিভিন্ন দফতরে অন্যায় তদবির করা। এই তদবিরে কোনো কর্মকর্তা অস্বীকৃতি জানালে তার নামে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ অফিস ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করতেন তিনি। জিয়াউল আমিন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন। এছাড়াও একাধিক নারীসহ তার নির্ধারিত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ জনগণের নামে মনগড়া মামলা ও অভিযোগ করে আসছেন।

র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন জানান, জিয়াউল আমিনের এই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংস্থাগুলোর অনুমোদন বাতিল করে দেয়। র‌্যাব-১১ এর অনুসন্ধানে জিয়াউল আমিন হারুন-অর-রশিদ এর কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন শতাধিক ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে। কোন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা করলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিতেন জিয়াউল আমিন। এর ফলে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ করার সাহস পেত না। জিয়াউল আমিনের স্ত্রী দৌলেতুন নেছা সংগঠনটির অর্থ সচিব ছিলেন। তিনি স্বামীর অপকর্মের একান্ত সহযোগী ছিলেন বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত