প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দুর্গতিনাশিনী ফিরলেন কৈলাশে

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা ও আনন্দঘন পরিবেশের পাশাপশি বিষাদের ছায়ায় সম্পন্ন হল শুভ বিজয়া দশমী, শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল সমাপ্ত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসবটি। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক আর বলিদানের মাধ্যমে দেবীর পূজা হয়েছে। ঢাকের বাদ্যে বিসর্জনের সুর অনুরণিত হয়। দূর কৈলাশ ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসেন নৌকায় চড়ে। গতকাল বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর স্বামীগৃহের উদ্দেশ্যে বিদায় নেন আবারো ঘোটকে।

মায়ের বিদায় বলে কথা। তাই গতকাল সকাল থেকেই মন্ডপে মন্ডপে নামে ভক্তের ঢল। ঢাক আর শঙ্খধ্বনি। টানা মন্ত্র পাঠ। উলুধ্বনি আর অঞ্জলি। সঙ্গে ঢাকের বাদ্য, নাচ, সিঁদুর খেলা। ভক্তরা র্প্রাথনা করে বলেন, মাগো তুমি র্দুগতি নাশ করো। শান্তি দাও, আমাদের শান্তি দাও। ধান, দুর্বা, মিষ্টি, লাড্ডু আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানানোর আয়োজন ছিলো চারদিকে।  বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল ছিলো সরকারি ছুটি। বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালাও প্রচার করা হয়েছে। সংবাদপত্রে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।

একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। শহরের শাহাপাড়া, আমলাপাড়া, কুড়িপাড়া, উকিলপাড়া, থানার পুকুর পাড়, নয়ামাটি সহ  বিভিন্ন মন্ডপে আবির উৎসবের ঢেউ উপচে পড়ে। সকালে ছিল দর্পণ ঘট বিসর্জন। নগরীতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে শীতলক্ষা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা উৎসবে বাধ সাধেনি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জড়ো হন অগণিত ভক্ত। পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন নিয়ে অনেকে আসেন দেবীকে শেষবারের মতো দেখতে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রা বের করা হয়। দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য দেব-দেবীকে নিয়ে ভক্তরা শোভাযাত্রাসহ ৫নং ঘাটে যায়। সেখানে মা কে বিসর্জনের মাধ্যমে সকল দেব দেবীকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা সভাপতি সংকর কুমার সাহা জানায়, আমারা খুবই আনন্দিত। এবং সার্বিকভাবে সহযোগীতার জন্য স্থানীয় সাংসদ ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের শারদীয় দুগোৎসবের আয়োজন সাফল্যমন্ডিত হয়েছে।

মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন জানায়, এবারের দুগোৎসবের আয়োজন আমারা খুব ভালোভাবে উপভোগ করেছি। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মূখিন হতে হয়নি। আর এজন্য সাংসদ, প্রশাসন, সাংবাদিক সহ অন্যান্য র্ধমাবলম্বী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

যুগ্ম সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, এবারের নিরাপত্তা বলয়ের কারণে খুব সুন্দর ও শৃঙ্খলভাবে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে। পুজা উদযাপন কমিটির সার্বিক তত্বাবধায়নে আমরা প্রতিবারই এমন ভালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বির্সজন সম্পন্ন করতে চাই।

এরআগে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়েছে। নবমীতেও মন্ডপে মন্ডপে ছিল বিদায়ের সুর। নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মহানবমী কল্পারম্ভ বিহিত ও সন্ধি পূজা। নানা আচারের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন। সাধারণত মহাষ্টমীর শেষ এবং মহানবমী তিথির সংযুক্ত সময়ে সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই সন্ধিক্ষণেই দেবী দুর্গার হাতে অসুর বধ হয়েছিল। আর গতকাল বিজয়া দশমীতে মর্ত্য ছেড়ে দুর্গতিনাশিনী ফিরে গেলেন কৈলাশে।

add-content

আরও খবর

পঠিত