নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : প্রতারণায় মামলায় রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ ও এমডি মাসুদ পারভেজের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর। করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে, প্রতিষ্ঠানটির এমডি এবং সাহেদের সহযোগী মাসুদ পারভেজেরও ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম জসিম উদ্দিনের আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও সাহেদের আরেক সহযোগী ও প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা তারক শিবলীর দ্বিতীয় দফায় সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
আদালতে রিমান্ড শুনানি চলাকালে কাঠগড়া থেকে বিচারকের উদ্দেশে শাহেদ বলেন, আমি কি একটা কথা বলতে পারি? এটি বলেই কাঠগড়ার ভেতরে কান্নাকাটি শুরু করেন শাহেদ।
তিনি বলেন, আমি দেড় মাস ধরে করোনায় আক্রান্ত। আমার বাবা করোনায় মারা গেছেন। আমি মার্চে প্রথম দিন যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাই, তখন তারা আমাকে আমার হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করতে বলেন। তখন আমি বলি আমার লাইসেন্সের ঘাটতি আছে। তখন তারা বলে যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দেন। আমি তাদের কথা মতো টাকা জমা দেই। সারা দেশে করোনা চিকিৎসার কাজ বেসরকারিভাবে আমরাই শুরু করেছি। তারপরেও আমার সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে।
এর আগে, সকাল ১০টায় রাজধানীর ডিবি কার্যালয় থেকে সাহেদ ও মাসুদ পারভেজকে একই গাড়িতে করে আদালতে নেয়া হয়। আদালতে নেয়ার পর অধিকতর তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে, শুনানি শেষে আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে মোহাম্মদ সাহেদকে পুনরায় ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, ১৫ জুলাই বুধবার জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সাহেদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছে র্যাব। বুধবারই জানা যায় মামলার তদন্তের দায়িত্ব গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখনই, ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
রিজেন্টের প্রতারণা মামলার তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। এজন্য গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকালই সাহেদকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবির কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে বুধবার বিকেলেই সাহেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাকে পুনরায় ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়।
এর আগে, ১৫ জুলাই বুধবার সকালে বোরকা পরিহিত অবস্থায় ছদ্মবেশে ভারতে পালানোর সময় সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় এনে তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয় উত্তরায় তার গোপন কার্যালয়ে। এ সময় বেশকিছু জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে, র্যাব সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রিজেন্টের গ্রেফতা হওয়া এমডির কাছ থেকে সাহেদের পালানোর সম্ভাব্য ধারণা পাওয়া গিয়েছিলো, সেই অনুযায়ী ও আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে অভিযান পরিচালিত হয়েছে বেশ কয়েকটি। গ্রেফতার এড়াতে সাহেদ ঢাকাসহ একেক দিন একেক জায়গায় আত্মগোপনে ছিলো। বিভিন্ন স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরাও ফলো করেছি তাকে। এর মাঝে ঢাকাও এসেছেন কয়েকবার। একেক সময় একেক বাহন ব্যবহার করেছেন, ব্যাক্তিগত, অন্য ট্রান্সপোর্ট, ট্রাক, পায়ে হেঁটে সে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই, নানা অভিযোগের ভিত্তিতে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর অভিযোগের সত্যতা মেলায় রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এ সময় ৮ জনকে আটক করা হলেও চেয়ারম্যানসহ ৯ জন পলাতক ছিলেন। পরে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) রিজেন্টের এমডি মাসুদ পারভেজকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর একদিন পর বুধবার (১৫ জুলাই) ভোরে ছদ্মবেশে ভারতে পালানোর সময় সাতক্ষীরার দেবহাটা গ্রেফতার হন মোহাম্মদ সাহেদ।