প্রতারক বাতেনকে নিয়ে থানায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক !

অনেক হাজীর সাথে প্রতারণা করেছে, ফয়াসালাটা সোমবার হবে : ওসি আসাদুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : পবিত্র হজ্বের নামে প্রতারণার নাানা অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য তদবিরে শেষতক করতোয়া এজেন্সীর পরিচালক হাবিবুর রহমান বাতেন সায়মনকে আটক করলেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী হাজীদের। তবে পুলিশের দাবি দুই পক্ষের সমাঝোতার শর্তে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রতারক বাতেন বাসায় চলে যায়। কোন গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।

জানা গেছে, শুক্রবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর ) ৩টায় হাজীগণ ও করতোয়া এজেন্সীর পরিচালক হাবিবুর রহমান বাতেন সায়মনকে নিয়ে এক সমঝোতার বেঠক হওয়ার কথা ছিল। এরপর সময় পরিবর্তন হয়ে মাগরিবের নামাজের পরে কথা থাকলেও সদর মডেল থানা ওসি আসাদুজ্জামান ও প্রতারক বাতেন না আসায় সমঝোতা বৈঠকে বিলম্ব হয়। তবে থানার সামনে ভুক্তভোগী অসংখ্য হাজীদের ভীড় দেখা যায়। পরে রাত ৮টায় করতোয়া এজেন্সীর পরিচালক হাবিবুর রহমান বাতেন সায়মন থানায় প্রবেশ করেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত এরপর প্রায় র্দীঘ ৩ ঘন্টা থানায় চলে এক রুদ্ধদ্বার সমঝোতা বৈঠক।

এ ব্যপারে সদর মডেল থানা ওসি আসাদুজ্জামান জানায়, সে (করতোয়া এজেন্সীর পরিচালক হাবিবুর রহমান বাতেন সায়মন) অনেক লোকের সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তার কাছ থেকে এখনো কোন হাজী ৪০ হাজার পায়, কোন হাজী ৫০ হাজার, এমন করে লক্ষাধিক টাকা পায়। আজ বসে কিছুটা সামারী নোট করা হয়েছে। অনেকের অভিযোগ তাই আবারো বসতে হবে। আগামী সোমবার ইন্সপেক্টর তদন্ত বসবে। কারণ হাজীদের টাকাগুলো দিতে বাতেন সম্মতি পোষন করেছেন। কিন্তু একজন করে দিবে, নাকি একবারে পরিশোধ করবে, সে বিষয়গুলো এখনো পরিষ্কার হয়নি। উভয়পক্ষকে ডাকা হয়েছে এটার বাকি ফয়সালাটা সোমবার হবে।

এদিকে হাজীদের সাথে করতোয়া এজেন্সির পরিচালক বাতেনের প্রতারণার ঘটনাটি সংবাদপত্রে প্রকাশের পর ভুক্তভোগি অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে থানায় আটকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী হাজীদের মধ্যেও একটা স্বস্তি কাজ করছিল। তবে শুক্রবার দিনগতরাতে প্রতারক হাবিবুর রহমান বাতেনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় নানারকম প্রশ্ন উঠেছে, এই প্রতারককে নারায়ণগঞ্জে কারা শেল্টার দেয়? কাদের সহায়তায় হজ্বের নামে এতো বড় প্রতারণা করে পার পেয়ে যাচ্ছে এই বাতেন। কারা তাকে রাতের আধারে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল? কে বা তদবির করল? ভূক্তভোগিদের দাবি এ অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক। তাহলে ভবিষ্যতে কখনো অসংখ্য হাজী পবিত্র হজ্জ পালনে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হবেনা। এজন্য জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন অনেকেই।

তবে এ প্রসঙ্গে ওসি আসাদুজ্জামান জানিয়েছে, হাবিবুর রহমান বাতেন সায়মনকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। হাজীদের সাথে যেন সংর্ঘষ না বাধে এজন্য উভয়পক্ষকে ডাকা হয়েছিল।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ভুক্তভোগী হাজিদের অভিযোগে জানা যায়, আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানার অনুমান ৩০ জন লোক সৌদি আরবে হজ্ব এর জন্য যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করলে বিবাদী  ১। হাবিবুল্লাহ বাতেন সায়মন (৫০) (করতোয়া হজ্ব এজেন্সীর মালিক) পিতা-মৃত কোটারী, সাং-মাসদাইর গুদারাঘাট, শীতলক্ষ্যা মন্দির সংলগ্ন, থানা-ফতুল্লা, জেলা নারায়ণগঞ্জ আমাদেরকে সৌদী আরবে নিয়ে গিয়ে সুন্দর পরিবেশে সকল প্রকার থাকা খাওয়া ঘুরা ফিরা সঠিকভাবে হজ্ব করিয়ে আনবে। জন প্রতি ৩,৫০,০০০/-( তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ) টাকা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাধীন বিবাদীর অফিসে অফিস মানি রিসিটের মাধ্যমে গ্রহন করে। আমরা গত ০১/০৮/২০১৯ তারিখ সকলেই সৌদী আরবে হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমরা আরো জানতে পারি যে, বিবাদী সর্ব মোট ৫১ জন লোক হজ্বে নিয়া যায়। আমরা সকলেই সৌদী আরবে পৌঁছানোর পর বিবাদী আমাদের কোন প্রকার থাকা খাওয়ার জন্য সুব্যবস্থা করে নাই।

বিবাদীর সাথে আমাদের সকলেরই চুক্তি ছিল যে, সে আমাদের সকলকে কাবা ঘরের আশেপাশে ঘর ভাড়া করিয়া মানসম্মত হোটেলের খাবার খাওয়াবে এবং সৌদী আরবে ৪০ ( চল্লিশ ) দিন রাখিবে। কিন্তু বিবাদী আমাদের কাবা ঘর হইতে ৩২ কিঃ মিঃ দূরে ঘর ভাড়া করিয়া রাখে। যার ফলে আমাদের প্রতিদিন সৌদী আরবে ১০০ রিয়াল অর্থ্যৎ বাংলাদেশের ২৩,০০/-( তেইশ শত ) টাকা অতিরিক্ত খরচ নিয়েছে। ৩০ ( ত্রিশ ) দিনের মধ্যে আমাদের সকলকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিবাদী আমাদের নিকট থেকে তার ওয়াদা অনুযায়ী টাকা গ্রহন করে সঠিক সেবা প্রদান না করে ১০ দিন সৌদী আরবে রাখে নাই। উল্লেখ্য যে, বিবাদী আমাদের সাথে চুক্তি ছিল যে, সে আমাদের সকলকেই মক্কা-মদিনায় নিয়ে যাবে। কিন্তু সে আমাদেরকে মদিনায় নিয়ে যাওয়ার কোন সু-ব্যবস্থা করে নাই। আমরা সকলেই নিজ উদ্দোগে সৌদী আরব ও বাংলাদেশ হজ্ব মিশনের সহায়তায় মদিনায় ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করি। বিবাদী দেশে ফেরার সময় আমাদের সকলের নিটক থেকে অতিরিক্ত ১০০০ ( এক হাজার রিয়াল ) অর্থ্যৎ বাংলাদেশের ২৩,০০০/-( তেইশ হাজার ) টাকা নিয়া আমাদের কাংক্ষিত সেবা প্রদান করে নাই। বিবাদী আমাদের সকলের সাথে প্রতারনা করেছে এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। উক্ত বিষয়টি আমরা সকলেই গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ দায়ের করিলাম।

তীব্র ক্ষোভ নিয়ে ভুক্তভোগী আরেক হাজী মো. মহিউদ্দিন জানায়, আমাদেরকে যে কয়দিন খাবার দিয়েছে তাও পচাঁ, বাসি। আমরা আল্লাহর ঘরে হজ্ব করতে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে মিনার কার্ড দেয়া হয়নি। মক্কা-মদিনায় যাওয়া আসা, থাকা-খাওয়া সকল ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা ছিল। এছাড়াও কথা ছিল ৪৫ দিন আমাদের রাখা হবে। ৩০ দিন রাখা হয়। র্কতৃপক্ষ হিসেবে বাতেন কোন দায়ভার ই নেইনি। বরং আমাদেরকে সেখানে নিয়ে গরু-ছাগলের মত বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। অন্য হজ্ব এজেন্সির কাছে। আমাদের এত নি¤œমানের খাবার দিয়েছে যা কুকুরও খায় না। খাবার বাবদ প্রতিজন সরকারী হিসেবে ২৭ হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু ১০০ টাকার খাবারও দেইনি। নিজের টাকায় কিনে খেয়েছি। ২০ জন মহীলা ছিল। একজন অসুস্থ হয়ে খোনে ভর্তিও ছিল। আমাদের কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একপর্যায়ে তার পাঠানো কর্মচারী আমির হোসেন সে পালিয়ে যায়। আমরা হাজীরা উপায় না দেখে বাংলাদেশ হজ্ব মিশন মক্কায় করতোয়া এজেন্সী ও বাতেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। আমরা টাকা দিয়ে গিয়েও সৌদি সরকারের সহযোগীতায় দানের টাকায় থাকতে হয়েছে। মদিনায় গিয়েছি তাদের ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় চারদিন থেকেছি। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। এখন বাতেন ও তার সহযোগী আমির হোসেন আটক আছে।

এরআগে দেশে বিভিন্ন অনিয়মের পর সৌদি আরবে গিয়েও নানা রকম প্রতারণামূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে বেসরকারি হজ্ব এজেন্সিগুলো। এজন্য মক্কা হজ্ব মিশনের ভুক্তভোগী হাজীরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে। হজ্ব ব্যবস্থাপনায় ৭৯টি বেসরকারি হজ্ব এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে মক্কা হজ মিশনে মোট ১০৭টি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হাজীরা। সে অভিযুক্ত হজ্ব এজেন্সিগুলোর তালিকায়ও করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল এর নাম রয়েছে। বিগত সময় এ নিয়ে ব্যপক আলোচনা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। তারপরেও এই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, প্রতারণা ও হজ্ব যাত্রীদের হয়রানী করা থেকে বিরত হচ্ছে না করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল।

add-content

আরও খবর

পঠিত