পা হারা শিশু আছমার পাশে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাব ও প্রশাসন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : জন্মগত পা হারা এক শিক্ষার্থীর কষ্টের পথচলা দেখে হতবাক হতে হয় সহপাঠিদের। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর পরিবারের সকল কাজ শেষে নিজের লেখাপড়া চালাতে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার জাঙ্গীর দারকাবোর টেক  হতে পিতলগঞ্জ চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত কখনো খুড়িয়ে খুড়িয়ে  হেটে, কখনো অর্ধেক পথ রিক্সাযানের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়।

রোদ, বৃষ্টি কি শীত! যে কোন আবহাওয়ায় বিদ্যালয়ে তার নিয়মিত যাতায়াত। তবু একটি কৃত্রিম পা হলে এই শিশুটিই আট দশ জন সাধারন শিক্ষার্থীর ন্যায় স্বাভাবিক চলাচলে করতো স্বাচ্চন্দ্যে। কিন্তু বিধি বাম। দিন মজুর বাবা জাফর আলী কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনমতে সংসার চালায়। তবে সেই বাবার আরো ৩ সন্তান রয়েছে। সংসারে বড় ছেলে আসিফ আব্দুল হক্ব ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় পড়ে। একই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পাঠদান করছে সেই জন্মগত পা হারা আছমা আক্তার জাইনুর(১২)। তার অপর এক ভাই ও বোন একই প্রতিষ্ঠানের ৩য় শ্রেণিতে পাঠদান করছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের পরিচালক মনিরুল হক্ব ভুইয়া তাদের অর্ধেক বেতনে পাঠদান করাচ্ছেন। তাই দিনমজুর হয়েও  জাফর আলীর ৪ সন্তানকেই বেসরকারী স্কুলে পড়াতে পারছেন।  আছমা আক্তারও নিয়মিত অন্য ভাইবোনদের সাথে তালমিলিয়ে লেখাপাড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।

কথা হয় আছমা আক্তার জাইনুরের সঙ্গে। সে জানায়, লেখাপড়া করে সমাজের জন্য কিছু করতে চায়। সুযোগ থাকলে ম্যাজিস্ট্যাট হয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে  কৃত্তিপা পা ব্যবহার করার কথা শুনে কেঁদে ফেলে সে। তার বাবার আর্থিক টানাপোড়েন তাই কিভাবে পা লাগাবে তার জানা নেই।

তার সহপাঠি ইভা আক্তার জানায়, জাইনুর অনেক শান্ত প্রকৃতির। কারো সাথে খারাপ আচরন করে না। বরং তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। আছমার শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রাজু জানান, আছমা ছুটি হলে  যখন অন্য সহপাঠিদের সাথে বিদ্যালয় থেকে বের হন। তখন অন্য শিক্ষার্থীরা তার ব্যাগ এগিয়ে ও বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার মত মহৎ কাজ করে। এতে আছমাও খুশি।

আছমার বাবা দিন মজুর জাফর আলী জানান, তার মেয়ে আছমার জন্মগতভাবেই পা হারা ছিলো। অপর ৩ সন্তান সুস্থ্য হলেও  পা হারা আছমাকে ছোটকালেই ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডাক্তাররা বড় হলে কৃত্রিম পা লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন সে বড় হয়েছে। কিন্তু ওই কৃত্রিম পা লাগাতে ৭০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান সাভারের  সিআরপি  (পঙ্গু) হাসপাতালের ডাক্তাররা। টাকার অভাবে মেয়েটির পা লাগাতে পারছেন না বলে জানান তিনি। এ সময় বিত্তবানদের সহযোগীতার দাবী জানান তিনি।

এ বিষয়ে আব্দুল হক্ব ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মনিরুল হক ভুইয়া বলেন, আছমা কোন দিন বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে না। তার মেধাও খুব ভালো। ভবিষ্যতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারলে  সমাজের ভালো একজন তৈরী হবে। তার জন্য বিদ্যালয়ের বেতনসহ সকল খরচ ফ্রি করা হয়েছে। তার পা স্থাপনের জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছি।

এদিকে এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে মেয়েটিকে সহায়তা করতে ছুটে আসেন রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কলামিষ্ট  ও  গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভুইয়া,  সহকারী কমিশনার (ভুমি) আসাদুজ্জামান মিয়া, রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির, এসআই শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আরব হোসেন, ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া, কাইউম মিয়াসহ স্থানীয়রা।  রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে তাৎক্ষনিক পা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কলামিষ্ট ও গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, মেয়েটির কথা শুনেছি। তার  কৃত্তিম পা স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।  এ ধরনের বেশ কয়েকজনকে একটি সংস্থ্যার মাধ্যমে বিনামূল্যে পা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা শুধুমাত্র লেখনীতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা সমাজের অবহেলিত, নিরীহদের নিয়ে যথারীতি কাজ করে আসছেন।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েটিকে সরকারী ভাবে সহায়তা করা হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত