নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : পলাতক বিএনপির তুখর নেতা জাকির খানের ছোট ভাই জিকু খানকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। ফতুল্লা থানায় সোহাগ হত্যা মামলা ও ১৬ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ফতুল্লার একটি হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি দেওভোগের নিজ বাড়িতে জাকির খানের ছোট ভাই জিকু খানের ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ ডজনখানেক মামলাসহ ১৬ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। তাছাড়াও ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার আসামিও তিনি। একাধিক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হয়েও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন জিকু খান। স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় জিকু খানকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তৎপর হয় পুলিশ। পরে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতার হয় জাকির খানের ছোট ভাই জিকু।
উল্লেখ্য, বিএনপির তুখর নেতা জাকির খান বিভিন্ন মামলা থাকার কারনে পলাতক রয়েছে। এক সময়ে দাপুটে বিএনপির এই তুখর নেতা গত ১৭ বছর যাবৎ দেশের বাইরে থাকলেও তার সমর্থক বাহিনী নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচীতে সক্রিয় ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
জাকির খানের পিতা মরহুম দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৮৯ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে উত্থান ঘটে জাকির খানের। ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ফতুল্লার বিশাল বিসিকপল্লী তথা ঝুট সেক্টরে একক আধিপত্য কায়েম করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় উঠে আসেন এ শীর্ষ সন্ত্রাসী। টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয়ে জাকির খান পরিবারের বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। সে সময় পতিতাপল্লীর নিয়ন্ত্রণও ছিল তার হাতে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষদিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে জেলে যান। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মুন্সীগঞ্জে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে গুলিবর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এ ব্যাপারে জাকির খানকে আসামি করে মামলা করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এরপর সে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যান। এরপর জাকির খান প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে থাইল্যান্ডের সুকুমবিতে পালিয়ে যান। সেখানে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে গ্রেস নামের ৮ তলা একটি থ্রি-স্টার হোটেল ক্রয় করেন। পরে জাকির খান চলে যান দুবাই।