নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার অপরাধে মালয়েশিয়ায় নারায়ণগঞ্জের ছেলে মো. রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করেছে। ২৪ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সিকিউরিটি কাউন্সিল।
আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত একটি তথ্যচিত্রে তিনি বলেছিলেন যে, অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, এবং ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে শত শত অভিবাসীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে মালয় মেইল সংবাদপত্র খবর দিয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে খোঁজ করার পর পুলিশ শুক্রবার সন্ধ্যায় মো.রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করেছে।
পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক খাইরুল জাইমি দাউদ জানিয়েছেন যে মো. রায়হান কবিরকে এখন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে এবং ভবিষ্যতে তাকে আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে দেয়া হবে না।
গ্রেফতার তরুণ রায়হান কবির নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (কদমরসূল অঞ্চল) ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ এলাকার শাহ্ আলমের ছেলে। স্থানীয় কাউন্সিলর হান্নান সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শাহ্ আলম একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার ছেলে রায়হান ২০১৪ সালে সরকারি তোলারাম কলেজে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে মালয়েশিয়া চলে যায়। সেখানেই বিএ পাস করে সে।
দেশে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল রায়হান। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি জানান, জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল সে। পরে মালয়েশিয়া যাবার পর সেখানেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। রায়হান মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের একটি অংশের প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরাও শুনেছি সে বন্দরের শাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে ওই এলাকায়। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রায় ২৬ মিনিটের ঐ ডকুমেন্টারিতে মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া অবৈধ শ্রমিকদের বেহাল দশার কথা তুলে ধরা হয়। রায়হান কবির ঐ তথ্যচিত্রে এ সম্পর্কে কুয়ালালামপুর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছিলেন।
ঐ ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, মহামারির মধ্যে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ দুই হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত শ্রমিককে আটক করেছে এবং কঠোর ভাইরাস লকডাউনের মধ্যে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। সে ভিডিওটি প্রচারের পর থেকেই মালয় সোশাল মিডিয়াতে মো.রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়। এর জেরে ধরে কর্তৃপক্ষ তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে, এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।