নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিবেদক ) : আর মাত্র কয়েকঘন্টা বাকি এরপর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তৈরি তিন স্তরকে করা হয়েছে আরও শক্তিশালী। ১৬ই জানুয়ারি নির্বাচনি কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার টিমের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটির মতো মোবাইল টিম থাকবে। ওয়ার্ড প্রতি র্যাবের অন্তত একটি মোবাইল টিম এবং বিজিবির অন্তত একটি প্লাটুন থাকবে।
গত ১৪ই জানুয়ারি শুক্রবার রাতে হেভিওয়েট দুই মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনি সহিংসতার আশঙ্কার পর ১৫ই জানুয়ারি শনিবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এ সব কথা জানান। আর, নাসিক নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পরিস্থিতি বেশ ভালো।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাঁচ শতাধিক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের আনাচে–কানাচে, অলিগলিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যোরা সতর্ক থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসী এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় এ পর্যন্ত নির্বাচনি পরিস্থিতি খুবই ভালো। প্রার্থীরা কোনো ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা না ঘটিয়ে প্রচার–প্রচারণা চালিয়েছেন। নগরবাসী একটি সুষ্ঠু পরিবেশ দেখছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনটি সারা দেশের জন্য মডেল নির্বাচন হিসেবে রূপ লাভ করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিলাম। ধীরে ধীরে আমরা সে বলয় আরও কঠোর করেছিলাম। এখন শেষ ধাপের কাজ চলছে।
জায়েদুল আলম বলেন, আজই পুলিশ সদস্যেরা প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পৌঁছে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে আনসার সদস্যেরা এবং পুলিশের দুইটি বিশেষায়িত ইউনিট–আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যেরা কাজ করবেন।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আরও বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত পাঁচ সদস্যের নেতৃত্বে অন্তত ১৫ জন আনসার সদস্য কাজ করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটির মতো মোবাইল টিম থাকবে, র্যাবের অন্তত একটি মোবাইল টিমও থাকবে। একই সঙ্গে প্রতি ওয়ার্ডে বিজিবির অন্তত একটি প্লাটুন রাখার চেষ্টা করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জের আবহাওয়া ভালোই থাকবে বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১৬ই জানুয়ারি রবিবার থেকে ঝলমলে আকাশের দেখা মিলবে সারাদেশে। তাই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ঘটবে বলে সবাই আশা করছেন। তবে অনেকের মধ্যেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, ইভিএমের কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোট কক্ষে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ভোটের মাঠে মেয়র পদে ৭জন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জনসহ মোট ১৮৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।
মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী হলেন : নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার, হাতপাখা প্রতীকে সলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, হাত ঘড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন, বট গাছ প্রতীকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জসীম উদ্দীন এবং ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. কামরুল ইসলাম (বাবু)।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সে সময় প্রার্থীরা প্রচারের জন্য সময় পেয়েছিলেন ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬ দিন। এবার ভোটগ্রহণ হবে ১৬ই জানুয়ারি। প্রচার শুরু হয়েছে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর, আর শেষ হবে এ বছরের ১৪ই জানুয়ারি রাত ১২টায়। অর্থাৎ এবার প্রার্থীরা প্রচারের জন্য সময় পেয়েছেন ১৮ দিন।
এরআগে গত ৩০ই নভেম্বর এই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর এবার হচ্ছে তৃতীয় নির্বাচন। প্রথমবার ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমে, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হয়। ২০১৬ সালে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে ভোট হয়। এবার ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। প্রথমবার নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয় এ সিটিতে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চালুর পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।