নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : আর মাত্র কয়েকঘন্টা বাকি এরপর অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাসিক নির্বাচনে ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ সদস্য। থাকবে পুলিশ ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স। যেকোনো অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হওয়ার আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকবেন। গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এই তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, নারায়ণগঞ্জে আদালাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯২টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃতে থাকবেন পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নাসিক নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ৬৪টি, প্রতি টিমে সদস্য থাকবেন পাঁচজন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য থাকবে। আরও অতিরিক্ত ৬ প্লাটুনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠিয়েছেন বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, নাসিক নির্বাচনে র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ৩টি, চেকপোস্ট থাকবে ৬টি, টহল টিম থাকবে ৭টি ও স্ট্যাটিক টিম থাকবে ২টি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নির্বাচনী মাঠের পর্যবেক্ষণ করেছি। কিছু কিছু ওয়ার্ডে টানটান উত্তেজনা আছে। বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ১, ২, ৬ নং ওয়ার্ডসহ শহর ও বন্দরে কয়েকটি ওয়ার্ড আছে। সেখানে তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে সাদা পোশাকে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও র্যাবের টহল অব্যাহত রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোট কক্ষে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ভোটের মাঠে মেয়র পদে ৭জন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জনসহ মোট ১৮৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।
মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী হলেন : নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার, হাতপাখা প্রতীকে সলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, হাত ঘড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন, বট গাছ প্রতীকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জসীম উদ্দীন এবং ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. কামরুল ইসলাম (বাবু)।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সে সময় প্রার্থীরা প্রচারের জন্য সময় পেয়েছিলেন ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৬ দিন। এবার ভোটগ্রহণ হবে ১৬ই জানুয়ারি। প্রচার শুরু হয়েছে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর, আর শেষ হবে এ বছরের ১৪ই জানুয়ারি রাত ১২টায়। অর্থাৎ এবার প্রার্থীরা প্রচারের জন্য সময় পেয়েছেন ১৮ দিন।
এরআগে গত ৩০ই নভেম্বর এই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর এবার হচ্ছে তৃতীয় নির্বাচন। প্রথমবার ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমে, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হয়। ২০১৬ সালে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে ভোট হয়। এবার ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। প্রথমবার নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয় এ সিটিতে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চালুর পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।