নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবদেক ) : নারায়ণগঞ্জে নৌভ্রমনের নামে নদী পথে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডিজে পার্টি। ইংরেজী, হিন্দি ও ডিজে গানের তালে তালে চলছে অশ্লীল নৃত্য। ফলে ভ্রমণের নামে অপসংস্কৃতির চর্চা, শব্দদূষণে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। এখানেই শেষ নয়, কিছু কিছু সংর্কীণ নদীর মাঝেই ৪তলা বিশিষ্ট পারাবত-৮, প্রিন্স আওলাদ, ইয়াদের মত বিশাল আকারের লঞ্চগুলো ধীর গতিতে রেখে চালিয়ে যায় ডিজে পার্টি। আর এতে করে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে নদীতে চলমান অন্যান্য ছোট লঞ্চ, ট্রলার ও ইঞ্জিনবিহিন নৌকায় চলাচলরত যাত্রীরাও।
স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি শুক্রবার কিংবা ছুটির দিনগুলোতে বিলাস বহুল থেকে ছোট লঞ্চগুলো নৌভ্রমনের জন্য নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পারে বিরিয়ে রাখা হয়। বিশেষ করে ৩নং ঘাট সংলগ্ন লঞ্চ ঘাট, হাজিগঞ্জ খেয়াঘাট, মদনগঞ্জ-কয়লাঘাটে এসব নৌভ্রমনের লঞ্চগুলো যততত্র পার্কি করতে দেখা যায়্। এরমধ্যে লঞ্চঘাটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও অন্যান্য নদীর পারে কোনরুপ অনুমতিবিহীন নোঙ্গর করে রেখে দেয়া হয়। এছাড়াও ছোট নদীতে খেয়া পারাপারের ঘাটের সামনেই নদীর মাঝ পথে বিশাল লঞ্চগুলো স্থির করে ডিজে পার্টি চালাতে দেখা যায়। এতে করে খেয়া পারাপারের নৌযানগুলোতে থাকা যাত্রীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে দেখা যায়।
তারা জানায়, এসব নৌভ্রমনে খুব কম সংখ্যকই শিক্ষিত সমাজের মানুষের চলাচল রয়েছে। যারাই যাতায়াত করে অধিকাংশই কিশোর ও যুবকদের ভিড় লক্ষ্য করেছে। বেশিরভাগ নৌভ্রমণে অশ্লীল পোশাকে নাচছেন নর্তকীসহ হিজড়ারা। আর এদের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করেও নাচছেন কিশোর-যুবকরা। যার ফলে যুব সমাজ ধবংসের পথে দাবিত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নদীপথে এমন ভয়ংকর দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা প্ওায়া ভুক্তভোগী একজন গৃহিনী বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারী ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ছুটির দিন। সেদিন প্রচন্ড ভীড় থাকায় নবীগঞ্জ থেকে নদী পারপারে প্রত্যেকটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার-নৌকা খালি পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই কোনরকম ইঞ্জিনবিহিন একটি নৌকায় উঠি। আর এরমধ্যেই মাঝপথে আসতেই পারাবত-৮ নামে একটি বিশাল লঞ্চ হঠাৎ করেই খেয়াঘাটের দিকে মুখ করে ঘুরাতে থাকে। এমন সময় আমাদের নৌকাটি কোনভাবেই নড়তে পারছিলনা। কারণ এতো বড় লঞ্চের পিছনের পাখার স্পীডে নৌকাটি তলিয়ে যাওয়া অবস্থা প্রায়। যেকরেই নৌকাটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলেও লঞ্চটির লক্ষবস্তু বুঝা যাচ্ছিল না। কারণ কিছুক্ষণ পরই আবারো এদিক-সেদিক ঘুরাতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রায় ১৫ মিনিট যাবৎ সেখানেই স্থির করে রাখে। আর অন্যদিকে আমার ছোট বাচ্চাসহ অন্যান্য যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার করলেও দেখার কেউ নেই। কারণ উচ্চ শব্দে চলছিল ডিজে পার্টি। সেদিন মনে হয়েছে কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাট পরিচালনাকারী একজনের সাথে কথা হলে তারা জানায়, পারাবত ৮ এবং প্রিন্স আওলাদ নামে দুইটি বিশাল জাহাজ এসেছিল। হাজিগঞ্জ খেয়াঘাটের ঠিক ডান পাশ বিরিয়ে রেখেছিল। সিদ্ধিরগঞ্জ ও খানপুর, হাজিগঞ্জ, পানিরকল এলকার মানুষরা নৌভ্রমনে গিয়েছিল। এ ঘাটের সামনে এভাবেই লঞ্চ ভিরানো হয়। এটা আমাদের জন্য নতুন নয়। তবে তাদের জন্য এই ছোট নদীতে নৌকা ট্রলার সহ ফেরী চলাচলেও কষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাঝে আধা ঘন্টা পর্যন্ত ফেরী চলাচল বন্ধ করে রাখতে হয়।
এ বিষয়ে কথা হলে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ ওসি মনিরুজ্জামান জানান, এসব বিষয়ে আমরা অবগত না। বিআইাডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। আর অনুমতি ছাড়া তো এভাবে নোঙ্গর করা ঠিক না। এসব বিষয়গুলো বিআইাডাব্লিউটিএ বলতে পারবে। তবে নদীতে শৃঙ্খলা রক্ষায় আপনারা এসব বিষয়ে নিরপত্তার স্বার্থে দেখবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, চেষ্টা করবো। আমাদের জানালে আমরা চেষ্টা করি।
বিআইাডাব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের কমকর্তা বাবু বৌদ্দলাল জানায়, এমনতো হওয়ার কথা না। যখন কোন লঞ্চ আসে তারা একটা ভয়েস দিয়ে জানায়। কত জন লোক যাবে। কোথায় যাবে এসব বিষয়ে। তারপরেও তাদের সবাধান হওয়ার বিষয়ে আমরা অবগত করবো।
এদিকে নদীপথে মানুষের জানমালের নিরাপত্তাকে জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নজরদারী প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচতেন মহল। তারা বলছেন, নদী পথে ট্রাফিক বিভাগ রয়েছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নৌ পুলিশ রয়েছে। এসব বিষয়গুলো তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখলেই নৌপথে যততত্র নোঙ্গর করে পার্কিং করে রাখা এবং নৌভ্রমনের নামে ডিজে পার্টি করে অপসাংস্কৃতি থেকে মুক্তি পাবে সকলেই। পাশাপাশি নদী পথে পারাপারের ক্ষেত্রেও ঝুঁকিতে থাকবেনা যাত্রীরাও।