নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জের থান পল্লি এলাকায় পুর্নবাসনের আগে উচ্ছেদে বন্ধ হয়ে গছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে চলমান বিশাল এ থান পল্লিটি এখন যেন ধ্বংস স্তুপে রূপ নিয়েছে। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে স্থানীয় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর। শহরের নিকটবর্তী ২ নং রেল গেইট থেকে শুরু হওয়া উকিলপাড়া, নন্দিপাড়া, গলাচিপা নিয়ে বিশাল এলাকায় অবস্থিত এসব ব্যবসায়ীদের এখন যেন করুন দশা, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমনই চিত্র।
জানা গেছে, শিল্প অঞ্চল হিসেবে সু-পরিচিত অন্যতম জেলা নারায়ণগঞ্জ। এই শহরেই প্রায় ২ কিলোমিটার পথ জুড়ে গড়ে উঠেছিল থান কাপড় ব্যবসায়ীদের সুবিশাল থান পল্লি এলাকাটি। ৫ হাজারেরও বেশী এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল ২০ হাজারের মত নারী ও পুরুষ শ্রমিক। যেখানে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রেলওয়ে থেকে জমি লিজ নিয়ে পরিচালনা করছিলেন এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন আওতাধীণ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছর পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে সম্প্রতি রেলওয়ে কতৃর্পক্ষের একটি উচ্ছেদে এখন তারা সর্বশান্ত।
ব্যবসায়ীদের দাবী, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ৩০ ফুট পর্যন্ত স্থাপনা উচ্ছেদের কথা থাকলেও কারো ইন্ধনে পুরো জায়গাই উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলের পায়তারা চালানো হচ্ছে। এরপরেও তারা বলছেন উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় স্থান ব্যতিত অবশিষ্ট জায়গা যেন ব্যবসায়ীদের জন্য বিবেচনা করা হয়। ইতমধ্যে থান পল্লিটি পুর্নবাসনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন সহ ব্যবসায়ী নেতা বিকেএমই সভাপতি এবং এমপি সেলিম ওসমানের সাথেও মতবিনিময় করেছেন তারা।
এ ব্যপারে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন তারা। এই উচ্ছেদে এখন তারা অসহায়। বিভিন্ন ক্রেতার কাছে রয়েছে তাদের বিশাল টাকা বকেয়া। যা পাওয়া এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, অন্য কোন কাজ না জানা থাকায়, একমাত্র এই ব্যবসাই তাদের শেষ সম্বল।
এদিকে ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, এদের পুর্নবাসন না করা হলে যেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ব্যবসায়ীরা তেমনি ১৫হাজার কোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হওয়ায় প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতির উপরেও। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় স্থান ব্যতীত অবশিষ্ট স্থানে থান ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনই একমাত্র সমাধান বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএ পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে। যেহেতু তারা কোটি কোটি টাকা ধার দেনা করে এসব ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছিল। তারা এখনও অনেকের কাছে টাকা পায়। এ উচ্ছেদে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তেমনি ১৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হওয়ায় প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতির উপরেও। এছাড়াও বিকেএমইএ সভাপতি ও আমাদের এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন তাদের জন্য অন্য একটা জায়গায় কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবস্থা করবে।
নাসিক ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ হোসিয়ারী সমিতি সভাপতি নাজমুল আলম সজল বলেন, আমার অনুরোধ যতটুকু প্রায়োজন রেলওয়ের সার্থে, ততটুকু জায়গা রেখে বাকিটা যেন আমাদের এই থান ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্ধ বা লিজ দেয়া হয়। কারণ পুরো নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এখান থেকে থান কাপড় কিনে নিয়ে বিভিন্ন পোশাক প্রস্তুত করে দেশে বিদেশে চাহিদা মিটাচ্ছে।