নওগাঁয় বড় খাস পুকুরটি আবারও নামমাত্র মূল্যে ইজারা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নওগাঁ প্রতিনিধি ) : নওগাঁর বদলগাছীতে  উপজেলার সবচেয়ে বড় একটি খাস পুকুর (নীলা দিঘি) নিয়ে তেলেসমাতি কারবার শুরু হয়েছে। প্রায় ১৫-২০ লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জানা যায়, বদলগাছী সদর ইউনিয়নের আখিট্টি মৌজায় ২২২ নং দাগে ৭.৬২ একর আয়তনের একটি খাস জলাশয় বা পুকুর রয়েছে। পুকুরটি নীলা দিঘি নামে পরিচিত। উক্ত পুকুরটি তিন বছর পর পর লিজ প্রদান করেন উপজেলা প্রশাসন। উক্ত পুকুরটি উপজেলায় অবস্থিত খাস পুকুরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুকুর। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে পুকুরটি নামমাত্র মূল্যে ইজারা প্রদান করা হতো। গত ১৪২২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪২৪ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত বাৎসরিক মাত্র ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে ইজারা প্রদান করেছিলেন উপজেলা প্রশাসন। অথচ পুকুরটির ইজারা মূল্য হওয়ার কথা ১৫ লক্ষ টাকার উপরে। চলতি বছর ১ম পর্যায়ে জলমহাল ইজারার দরপত্র আহবান করলে তালিকায় সবচেয়ে বড় জলাশয় নীলা দিঘির নাম না থাকায় সকলেই হতবাক হয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে অনেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা অলি আহমেদ রুমী চৌধুরীকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেন। পরবর্তীতে  চলতি ১৪২৫ থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের জন্য উক্ত পুকুরটি ইজারার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।

মজার বিষয় হলো উক্ত দরপত্রের মূল্য নির্ধারনী কলামে ১.২৭ একর আয়তনের পুকুরের সরকারী মূল্য ২ লক্ষ  ৩৮  হাজার  ৩ শত ৫০ টাকা। ১.৬৩ একর পুকুরের সরকারী মূল্য ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫০ টাকা । অথচ ৭.৬২ একর (নীলা দিঘী ) পুকুরের সরকারী মূল্য ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৩৬ হাজার ২ শত ৫০ টাকা। ৫ জুন মঙ্গলবার দরপত্র দাখিলের দিনে একটি প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন সমিতির নামে বিক্রয়কৃত দরপত্রগুলো কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে আবারো নাম মাত্র মূল্যে আখিট্রি আদর্শ মৎস্য জীবী সমবায় সমিতি ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং পারশাপিলা মৎস্য জীবী সমবায় সমিতি ২ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা দরপত্র দাখিল করে। আখিট্রি মৌজার  কতিপয় ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন  আখিট্রি আদর্শ মৎস্য জীবী সমবায় সমিতি সভাপতি ও সাধারন সমম্পাদক প্রকৃত মৎস্যজীবি নয়।

ঐদিন সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতির সুযোগে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ইউএনও অফিস অবরুদ্ধ করে রাখেন। কেউ অফিসে যেতে চাইলে তার কাছে কোন খাম আছে কিনা তা তারা জানতে চান। চেকিং করে তারপর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সমিতির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বলেন আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দরপত্রগুলো নিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কয়েকটি দরপত্র ছিড়ে ফেলা হয়েছে।

এক সমিতির সদস্য বলেন, আমরা ১৫ লক্ষ টাকার ডাক দেওয়ার জন্য ৩ লক্ষ টাকার বিডি করেছিলাম কিন্তু দরপত্র দাখিল করতে পারলাম না। পুন: দরপত্র আহবান করা হলে আরো উচ্চ মূল্য পাওয়া যাবে বলেও তাঁরা মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আলী বেগ বলেন ১৭ টি দরপত্র বিক্রয় হলেও কেন ২টি দরপত্র পড়েছে তা বোধগম্য নয়। তাছাড়া কেউ অভিযোগ করলে তা দেখা হবে এবং সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক প্রকৃত মৎস্যজীবি কিনা তা তদন্ত করে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা অলি আহমেদ রুমী চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ইউএনও সাহেব উপস্থিত থাকলে হয়তোবা এ রকম পরিস্থিতি ঘটতনা। তিনি আরো বলেন আমি অনেক চেষ্টা করে দরপত্র আহবানের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু সমিতির লোকজন যদি এর সদ্ব্যবহার না করেন তাহলে তা খুবই দু:খ জনক।

তিনি আরো বলেন, পুন: দরপত্র আহবান করা হলে এবং নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলে আরো উচ্চ মূল্য পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করি। বিষয়টি বর্তমানে শহরে টক অব দ্য টাউনে পরিনত হয়েছে। সচেতন এলাকাবাসী এবিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত