দোকান খুলে নেতা বনেন !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন)  :  হঠাৎ করেই যেন বেড়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নাম সর্বস্ব সংগঠন। যেসব সংগঠনকে আওয়ামী লীগ সহযোগী কিংবা অঙ্গসংগঠন দাবী না করলেও ব্যবহার হচ্ছে লোগো কিংবা নেতাদের ছবি। নারায়ণগঞ্জেও এমন অধিকাংশ সংগঠনে লীগ শব্দ ব্যবহার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ এর বাঘা বাঘা নেতাদের ছবি দিয়ে সড়কে সাটিয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন।

শুধু তাই নয়, স্মরণ সভা, মিছিল সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের জাগান দিতে দেখা গেছে। ওইসময় বক্তৃতা দিতে গিয়েও অনেক নেতারাই বলেন, কাউয়া-হাইব্রিডদের দলে জায়গা নাই, আর বাস্তবতা ভিন্ন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা,  তাঁর কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা,  শেখ রাসেল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নাম সহ কেন্দ্রিয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করছেন ওইসবয় সংগঠনের হোতারা। এমনকী মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ এর সাথে লীগ যুক্ত করেও অনেক সংগঠন গড়ে উঠছে। মাঝে মধ্যেই নানা ইস্যুতে সভা করলে দেখা যায় আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির নেতারা যোগও দেন।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক দপ্তরে আবার ওইসব সংগঠনের নামে ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে মূল দলের সম্পৃক্ততা এবং স্থানীয় নেতাদের প্রভাব দেখাতে তদবির বানিজ্য, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতেও জড়িত রয়েছে কেউ কেউ। সারাদেশের মত এ জেলাতেও রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের পরিবারের নামে গড়া অসংখ্য সংগঠন। আর এসব সংগঠন ও নেতাদের আওয়ামী লীগের লগ্ন কিংবা দু:সময় দেখা যায়নি। গত তিন টার্ম দল ক্ষমতা থাকায় সুবিধা নিতেই দিন দিন বেড়েছে এসব ভুঁইফোড় সংগঠন ও বিনদেশী নেতাকর্মমীর আগমন। গত এক দশকেই এর বিচরণ সবচেয়ে বেশী।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সহযোগী সংগঠনের সংখ্যা সাতটি। সেগুলো হলো মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ ও যুব মহিলা লীগ। এর বাইরে ভ্রাত্বৃপ্রতিম সংগঠন দুইটি হলো- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ।কিন্তু আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বলছে, এ দুটি সংগঠন তাদের স্ব স্ব সংগঠনের গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অনেক নেতারাই পদচ্যুত হয়ে খুলে ফেলে সংগঠন নামে এসব ‘দোকান’। মূল পদে থেকে সারা জেলায় কেউ কেউ চালায় কমিটি বানিজ্য। আর দলে বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতা মূলত পেছন থেকে এসব সংগঠনকে সর্মথন করেন নিজেদের প্রচারের স্বার্থে। এসব ব্যপারে শাস্তিহীনতার সুযোগ নিয়ে সংগঠনের অপব্যবহার করছে সুবিধাভোগী মহল।

এসব বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম বা ছবি ব্যবহার করে কেনো রাজনৈতিক দোকান খেলা যাবেনা।  আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এর আগেও পুলিশকে এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তখন কিছু ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে। আবারও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে।

এদিকে বারবার শক্ত ব্যবস্থার কথা বলা হলেও আওয়ামী, বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী, কিংবা লীগ শব্দ ব্যবহার করে সংগঠনের সংখ্যা খুব বেশি কমানো যায়নি। নারায়ণগঞ্জেও এ ধরণের সংগঠনের কমতি নেই। কেন্দ্রিয় হুশিয়ারী থাকলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে দায়িত্বে থাকা নেতাদরে পক্ষে এখনো পর্যন্ত ওইসব ভূঁইফোড় সংগঠনের দোকান বন্ধে কোনো উদ্যোগ বা কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, আমি সবসময়ই কাউয়া-হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে বলি। তবে করোনাকালীন সময়ে আমরা মিটিং করতে পারছিনা। শিঘ্রই ওইসব ভূঁইফোড় সংগঠনের ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমিও দেখেছি, বিভিন্ন পোষ্টার ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা দেয়া হয় ছোট লোগোর মত, অথচ অচেনা নামধারীরা বড় ছবি দিয়ে নেতা সেঁজে বসে। ইতমধ্যে আমাদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিস্কার করেছে, কোন সংগঠনগুলো আমাদের সহযেগী সংগঠন। আমরা আর ছাড় দিবো না।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে আমি কি করবো। কেন্দ্র থেকে যদি কোন নির্দেশনা দেয়, তাহলে দেখবো। বিশেষ করে যেসব জনপ্রতিনিধি ও নেতারা যায় তাদের ধরা দরকার। তারা ওইসব ভূঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের কেন শাসন করেনা। তাছাড়া কেন্দ্রিয় কিছু নেতারাই বা কেন তাদের অনুমোদন দেয়।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই বলছেন, মূল অথবা সহযোগী সংগঠনের বাইরে আরও অনেক সংগঠন আছে, যেগুলোর নামও তাদের জানা নেই। সুযোগসন্ধানী এসব সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। নারায়ণগঞ্জেও এমন অনেক সংগঠনের কমিটি রয়েছে, যাদের তদন্ত করে শাস্তি’র আওতায় আনা জরুরী বলে মনে করেন বোদ্ধা মহল। সম্প্রতি ৭৩ টি সংগঠনের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়াও অনেক নাম সর্বস্ব সংগঠনের নেতাকর্মী জেলা জুড়ে দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

আওয়ামী লীগের মূল দল অথবা সহযোগী সংগঠনের বাইরে রয়েছে গণমাধ্যমে এমন প্রকাশ পাওয়া সংগঠনগুলো হলো-

১. জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, ২. জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ, ৩. আওয়ামী প্রচার লীগ, ৪. আওয়ামী সমবায় লীগ, ৫. আওয়ামী তৃণমূল লীগ, ৬. আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, ৭. আওয়ামী মোটরচালক লীগ, ৮. আওয়ামী তরুণ লীগ, ৯. আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, ১০. আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, ১১. আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, ১২. আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ১৩. আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, ১৪. আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ১৫. আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, ১৬. আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, ১৭. বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, ১৮. বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ১৯. বঙ্গবন্ধু একাডেমি, ২০. বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, ২১ ওলামা লীগ, ২২. বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, ২৩. বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, ২৪. বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, ২৫. বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, ২৬. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, ২৭. বঙ্গবন্ধু বাস্তহারা লীগ, ২৮. বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, ২৯. বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, ৩০. বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, ৩১. বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, ৩২. বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, ৩৩. বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, ৩৪. বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, ৩৫. বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, ৩৬. আমরা মুজিব সেনা, ৩৭. আমরা মুজিব হব, ৩৮. চেতনায় মুজিব, ৩৯. বঙ্গবন্ধুর সৈনিক লীগ, ৪০. মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, ৪১. নৌকার সমর্থক গোষ্ঠী, ৪২. দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ৪৩. ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ৪৪. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, ৪৫. নৌকার নতুন প্রজন্ম, ৪৬. ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ৪৭. ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, ৪৮. ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ, ৪৯. বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগ, ৫০. ঠিকানা বাংলাদেশ, ৫১. জনতার প্রত্যাশা, ৫২. রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, ৫৩. জননেত্রী পরিষদ, ৫৪. দেশরতœ পরিষদ, ৫৫. বঙ্গমাতা পরিষদ, ৫৬. বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, ৫৭. আমরা নৌকার প্রজন্ম, ৫৮. আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট, ৫৯. তৃণমূল লীগ, ৬০. একুশে আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, ৬১. আওয়ামী প্রচার লীগ, ৬২. সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ, ৬৩. বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি লীগ, ৬৪. আওয়ামী শিশু লীগ, ৬৫. আওয়ামী তৃণমূল লীগ, ৬৬. আওয়ামী তরুণ প্রজন্ম লীগ, ৬৭. আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, ৬৮. বাংলাদেশ জনসেবা লীগ, ৬৯. আওয়ামী শিশু-কিশোর লীগ, ৭০ অভিভাবক লীগ, ৭১ উদ্যোক্তা লীগ, ৭২. আওয়ামী অনলাইন লীগ এবং ৭৩. বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ।

add-content

আরও খবর

পঠিত