নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : গত ১৮ দিন যাবৎ কারাগারে জুলাইযোদ্ধা ও সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান। পরপর তিনবার তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার বয়সের অন্যান্যদের সাথে আগামী শনিবার (৩১ মে) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষা দেয়ার কথা মেধাবী এই তরুণের। কিন্তু ভাগ্যের কি নিমর্ম পরিহাস, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই তাকে পরীক্ষা দিতে হবে কারাগারের বন্দিশালায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান একজন মেধাবী ছাত্র। মাধ্যমিক জিপিএ-৫ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৪.৪২ পাওয়া এই শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেছিলেন উচ্চশিক্ষা নিয়ে একদিন দেশ ও জাতির জন্য কাজ করার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে আগামী ৩১ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এর আগে গত ১২ মে দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে বাধা ও গাড়িতে হামলা করেছে। এরপর থেকে গত ১৮ দিন যাবৎ সে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে অবস্থান করছে।
জিসানের মা আছমা বেগম বলেন, রাত পোহালে আমার ছেলের পরীক্ষা। কিন্তু গত ১৮ দিন ধরে সে জেলে। কোনো প্রস্তুতি নিতে পারে নাই। কেমনে পরীক্ষা দিবো আর কি পরীক্ষা দিবো? ও যদি পাস না করে, ওর ভবিষ্যৎ শেষ হইয়া যাইবো। জিসান আমাদের একমাত্র ভরসা। ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হইলে আমাগো কী হইবে! কে দেখবো আমাগো
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে এই মা বলেন, রমজান মাসে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনেকগুলা বই নিয়া আসে। ওই থেকে আমার ছেলে বাসায় দিন-রাত পড়াশোনা করতাসে। সবাই পুলিশরে অনুরোধ করসে, জিসানরে নিয়েন না, ওর পরীক্ষা। কিন্তু কারো কোনো কথা শুনলো না। টানতে টানতে নিয়া গেল ছেলেটারে। আন্দোলনে গিয়া কোমড়ে-পায়ে ব্যথা পাইসে। প্রতিদিন ব্যথার ঔষধ খায়। ওরে আমি বিছানায় তুলে দেই আবার নামাই। ও কেমনে গেলো হামলা করতে? জানি না আমার ছেলেটা কেমনে আছে।
জিসানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন জানান, গ্রেপ্তারের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার জিসানের জামিন আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবার আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছে। সর্বশেষ শুনানিতে জিসানের পরীক্ষার বিষয় তুলে ধরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সাময়িক জামিন চাওয়া হয়েছিল কিন্তু আদালত তা গ্রহণ না করে পরবর্তী শুনানি ৩ জুন ধার্য করে।
জামিন না পাওয়ায় শেষে বুধবার (২৮ মে) আদালতে আবেদনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে কারাগারের ভেতরে জিসানের পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান এ আইনজীবী।
অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন বলেন, সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তারের সময় জিসান পুলিশকে বাধা দিয়েছে বা গাড়িতে হামলা করেছে, পুলিশ এমন কোনো তথ্য প্রমাণ আদালতে এখনো উপস্থাপন করতে পারেনি। জিসানের জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা, সাংবাদিকতা ও পরীক্ষা বিষয়টি বারবার তুলে ধরার পরও আদালত বিষয়টি আমলে নেয়নি এবং তার জামিন মঞ্জুর করেনি।
ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না দাবি করে তিনি বলেন, একজন মেধাবী তরুণ যার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই, মেডিকেল সার্টিফিকেট নাই, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না। তাকে আটক করা হয়েছে। আমরা সমস্ত তথ্য প্রমাণ দিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেছিলাম কিন্তু আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
প্রসঙ্গত, জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান একাধারে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, ক্ষুদে লেখক, সাংবাদিক ও সংগঠক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয় এক কর্মী।
জিসান নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’-এর প্রতিবেদক এবং প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জ কমিটির পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। সে প্রথম আলোর কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’তেও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে লেখালেখি করতেন।