নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জে জাতীয় হটলাইন ৩৩৩-এ খাদ্য সহায়তা চেয়ে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া অসহায় ফরিদ উদ্দিনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি একতরফাভাবে ওয়ার্ড মেম্বার আইয়ুব আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে ভুক্তভোগীকে জরিমানা করা সদর উপজেলার ইউএনও আরিফা জহুরাকে।
৩ই জুন বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোয় গিয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে কয়েকশ ডকুমেন্ট ও ভিডিও ফুটেজ জমা দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আগামী রবিবার প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার কথা থাকলেও আজ জমা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে ইউএনওকে সরাসরি দোষী করা না হলেও ভবিষ্যতে ৩৩৩-এর ফোনের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে শুধু স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ওপর নির্ভর না করে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম এবং প্রয়োজন বোধে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বলেন, ঘটনার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির যথাযথভাবে তথ্য দিতে না পারাকেই দায়ী করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সেবা গ্রহীতার আর্থিক সংগতির বিষয়ে যথাযথভাবে তথ্য দিতে পারেননি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাই ভবিষ্যতে ৩৩৩ এর ফোনের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাকে আরও সতর্ক হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। যেহেতু প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের অধীন কাশীপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বারকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, পরবর্তী সময়ে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অসহায় ফরিদ উদ্দিনের এলাকার সাধারণ মানুষ এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জানান, এ ঘটনায় স্থানীয় মেম্বারের পাশাপাশি ইউএনও সমানভাবে দোষী। নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট জন হিসেবে পরিচিত রাফিউর রাব্বি প্রতিবেদনটিকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ইউএনওর অপরাধকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত ১৮ই মে ৩৩৩ তে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চেয়ে বিপাকে পড়েছিলেন ফরিদ উদ্দিন। মেম্বারের ভুল তথ্য দেওয়ার জেরে ইউএনও তাকে উল্টো একশ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার শাস্তি দেন। পরে ফরিদ উদ্দিন সহায়তার ব্যবস্থা করেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে সমালোচনা আরও বেড়ে যায়। মেম্বার আইয়ুব ইউএনওকে জানিয়েছিলেন, ফরিদ উদ্দিন চারতলা বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ী। এই ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইউএনও সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর অভিযোগে অসহায় ফরিদ উদ্দিনকে শাস্তি দেন। এ ঘটনায় গত ২৩ই মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন এবং সেদিনই ফরিদ উদ্দিনকে তার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আইয়ুব আলী দাবি করেন, ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। তাকে ফাঁসানো হয়েছে, বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। তারা প্রশাসনের লোক, তারা যা বলবেন বা করবেন, তার সবই ঠিক।