কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে র‌্যাব

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : এবার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে শক্ত পদক্ষেপ নিয়ে মাঠে নামছে র‌্যাব। এজন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় থাকা কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের ওপর বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব কিশোর গ্যাং ইতিমধ্যে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

র‌্যাব বলছে, বরগুনার কিশোর গ্যাং লিডার নয়ন বন্ড থেকে শুরু করে টঙ্গীর নবম শ্রেণীর ছাত্র শুভ হত্যার মতো ঘটনা আর একটিও ঘটতে দেয়া যায় না। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ইতিমধ্যে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে নির্দেশ দিয়েছেন। র‌্যাবের ওয়েবসাইট ও রিপোর্ট-টু র‌্যাব নামক অ্যাপসের মাধ্যমেও কিশোর গ্যাংসংক্রান্ত তথ্য র‌্যাবকে জানানো যাবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার নবনিযুক্ত পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান এসব কথা বলেন। বুধবার র‌্যাব সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে মাদকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে-যা খুবই উদ্বেগজনক। কিশোর গ্যাং যখন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তখনই সেখানে অস্ত্র চলে আসে। এর সঙ্গে হত্যা এবং ধর্ষণের মতো বিবেকহীন কাজও ঘটে। জঘন্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের সবকিছুই জড়িয়ে যায়। এজন্য অভিভাবকদের সক্রিয় এবং সচেতন হয়ে সন্তানদের খোঁজখবর রাখার আহ্বান জানিয়েছে র‌্যাব। সন্তানরা সন্ধ্যার পর কোথায় থাকছে, স্কুলের নামে অন্য কোথাও যাচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের প্রতি যথাযথ খেয়াল না করার ফলে তারা যদি বিপথগামী হয় তবে অভিভাবকদেরও দায়ভার নিতে হবে।

র‌্যাব সদর দফতর জানায়, অন্যান্য অপরাধ দমনে র‌্যাব যেভাবে কাজ করে আসছে ঠিক একইভাবে কিশোর অপরাধ দমনে কাজ শুরু করেছে র‌্যাব। কারণ এখন যারা কিশোর তারাই ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু কিশোরদের একটি অংশ যদি বিপথগামী হয় তাহলে ভবিষ্যতে ভালো নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। এজন্য র‌্যাব কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে অগ্রধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে।

আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ১২ জুলাই টঙ্গীতে নবম শ্রেণীর ছাত্র শুভ হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংস ঘটনা। কারণ যে মারা গেছে তার বয়স ১৬ আর যে হত্যা করেছে সেও নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার বয়সও মাত্র ১৭। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ১৫ জুলাই তুরাগ এলাকায় আরেকটি কিশোর গ্যাংয়ের ৯ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সমাজে কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিশোর আদনান হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমরা জানি। গত বছর নভেম্বরে বাইকার গ্যাংস্টার নামের একটা গ্রুপ গ্রেফতার হয়। শাহজানপুর এবং সবুজবাগ এলাকায় তারা ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। র‌্যাব-৩ তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে এ গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে এবং কিশোররা এতে জড়িয়ে পড়ছে। এটা সমাজের জন্য ভালো নয়। এ কিশোর গ্যাংয়েরই পরিণতি বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড এবং নয়ন বন্ডের সেই ০০৭ গ্রুপের কথা সবারই জানা।

র‌্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হাসান বলেন, এসব কিশোর গ্যাং কিন্তু একেকটি অপরাধ কাণ্ড ঘটিয়ে থ্রিলিং মনে করছে। তারা থামছে না। আস্তে আস্তে তাদের অপরাধের গণ্ডি ছড়িয়ে পড়ছে। এটা সমাজের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। র‌্যাব ফোর্সেস এগুলো থেকে তার দৃষ্টি ফেরায়নি। ক্রমাগত অভিযান চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সুধী সমাজ, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একটি বার্তা দেয়া হচ্ছে যে- আপনারা সবাই এখনই কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন। গ্যাং কালচার থেকে বেরিয়ে অন্য কিছুতে কিশোরদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা উদ্যোগী হন। কিশোরদের বই পড়াতে উৎসাহিত করা যায়, শরীর গঠনের জন্য জিম কালচার, অথবা খেলাধুলার জায়াগায় তাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

র‌্যাবের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, গ্যাং কালচারের কারণ মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা। এছাড়া প্রেমঘটিত বিষয়, হিরোইজম দেখানো এসব করতে গিয়েও কিশোরদের বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। পাড়ায়-মহল্লায় একটি গ্যাং থেকে আরেকটি গ্যাং কিভাবে ক্ষমতাধর হবে তারই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে। এজন্য বাইক রেস বা ব্যক্তিগত গাড়ি শব্দ করে দ্রুত চালিয়ে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের একটা প্রবণতা কিশোর গ্যাংদের মধ্যে দেখা যায়।

কিশোর গ্যাংদের রাজনৈতিক শেল্টার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব পরিচালক বলেন, এটা ঠিক যে বড় ভাই অন্য কোনোভাবে তাদের শেল্টার থাকে। কিন্তু আপনাদের বলে রাখতে চায় যে, র‌্যাব যখন কোনো কাজ করে তখন মাঝপথে থেমে যায় না।

র‌্যাব মূলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সুতরাং আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই কিশোর গ্যাং হোক আর যেই হোক অপরাধের শেল্টারদাতাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

এখন পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৩৫ সদস্যকে আটক করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের দেশের আইন অনুযায়ী সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিয়ে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের নজরদারিতে আরও অনেকেই আছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আপনারা গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দৃশ্যমান অভিযান দেখতে পাবেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত