নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজি মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনকে অবাধ এবং সুষ্ঠু করতে আমাদের প্রশাসনের সকল প্রস্তুতী সম্পন্ন করেছি। এ নির্বাচনে কোনো কাক-পক্ষীরও বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ নেই। আমাদের র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার প্রতিটি কেন্দ্র ঘিরে অবস্থান নিবেন। আমরাও জালের মত বিস্তৃত হয়ে আছি। নির্বাচনকে ঘিরে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তৎক্ষনাত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল প্রতিবেদককে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি আরো বলেন, মাত্র একটি উপজেলায় ভোট গ্রহন চলবে। ৫৪ টি কেন্দ্র, যেখানে প্রতি ৩টি কেন্দ্র করেই আমাদের টীম কাজ করবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সকলের ফোকাস এখন সেখানেই। তাই কাউকে যদি জাল ভোটের চেষ্টা করতে দেখি গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর জাল ভোট প্রদানের প্রমান পাই তাহলে ওই কেন্দ্র আমরা বন্ধ করে দিবো।
প্রসঙ্গত, আজ ৮মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহন শরু হয়ে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে লড়াই করবে মোট ১০ জন প্রার্থী। ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী করে ভোটাররা তাদের পছন্দ অনুযায়ী চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩জন জনপ্রতিনিধিকে বেছে নিবেন।
নির্বাচনে অংশ নেয়া যে চারজন চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী লড়ছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ (দোয়াত-কলম)। এছাড়া ভোটের মাঠে আছেন সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। তার প্রতীক চিংড়ি মাছ। তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত। জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে লড়াই করছেন। তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভও হেলিকপ্টার প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। যদিও শুভ তার পিতার পক্ষেই প্রচার চালাচ্ছেন।
এছাড়া, ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- দুবারের ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু (উড়োজাহাজ), বন্দর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুয়েল (টিউবওয়েল), আলমগীর হোসেন (মাইক) ও মোশাঈদ রহমান মুকিত (তালা)। সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর একজন বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন (ফুটবল) এবং আরেকজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার (কলস)।
জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবিও মোতায়েন থাকবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিক নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে নির্বাচন কমিশন এক প্রক্ষাপনে প্রতি ইউনিয়ন বা পৌরসভায় এক জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের কথা জানালেও নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আলোচিত বন্দর উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে এ সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।
বন্দরে নিয়োগ দেওয়া ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হলেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইলোরা ইয়াসমিন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. আল মামুন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রবিন মিয়া, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মনোনীতা দাস, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ফতুল্লা রাজস্ব সার্কেল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাৎ হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নারায়ণগঞ্জ সদর ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট লাইলাতুল হোসেন, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আহসানুল আলম, সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আতাহার শাকিল।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান মোল্লাকে নির্বাচনী অপরাধসমূহ আমলে নিয়ে দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত বিচারের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই ১০ জন নির্বাহী ও ১ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী ২ দিন নিয়ে মোট ৫ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্দর উপজেলার ৩৫টি কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু।
উল্লেখ্য, বন্দর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ৫০০ জন; নারী ভোটার ৬৪ হাজার ৬২ জন এবং হিজড়া ভোটার ২ জন।