নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলি নামের এক নারীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনি সাজিয়ে কুৎসা রটানোর অভিযোগ করে নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার ওরফে খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় খোরশেদের পক্ষ নিয়ে লাইভে এসে সায়েদা শিউলির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করায় ফেরদৌসী আক্তার রেহানাকেও আসামি করা হয়। ১৭ই মে সোমবার দুপুরে সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলি বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলার বাদী ফতুল্লা থানার ৩২১ নম্বর উত্তর চাষাঢ়ার মৃত জহিরুল হকের মেয়ে। তিনি কাউন্সিলর খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সিএনজি অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও বিজেএমইএর সদস্য। ব্যবসার কাজে প্রায় সময় তাকে দেশের বাইরে অবস্থান করতে হয়। বিবাদী খোরশেদের সঙ্গে তার পরিচয় ছেলে বেলা থেকে। এর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। সে ঘরে সন্তানও রয়েছে। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে খোরশেদ এবং বাদী ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। একপর্যায়ে খোরশেদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ২০২০ সালের ২ আগস্ট কাঁচপুরের এসএস ফিলিং স্টেশনে শিউলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর খোরশেদ নিজেই কাজী নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর তারা বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে রাতযাপন করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে খোরশেদ তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় বাদী ব্যবসায়িক কাজে দুবাই চলে গেলে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল কাউন্সিলর খোরশেদ তার ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, মানহানিমূলক তথ্য উপস্থাপন করেন এবং বাজে মন্তব্য করেন। একদিন পর ২৫ এপ্রিল ফেরদৌস আক্তার রেহানা ওরফে রেহানা মুসকান নামের এক নারী খোরশেদ খন্দকারের বাসায় বসে লাইভে এসে তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। বাদীকে রাস্তার মেয়েদের সঙ্গে তুলনা করে আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং তার চুল কেটে দেয়ার হুমকি দেন। পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বর্তমানে দেশেই অবস্থান করছেন।
বাদী সায়েদা আক্তার শিউলি বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি এ মামলা করেছি। আশা করি ন্যায়বিচার পাব। তিনি সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২৪ই এপ্রিল শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে খোরশেদ দাবি করেন, ওই নারী তাকে বিয়ে করার জন্য গাড়িতে করে কাজী নিয়ে তার বাসায় এসেছিলেন। তবে এসব কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে তাকে বোঝানো হয়। এর পরও তিনি উচ্চপদস্থ বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এও হুমকি দিয়েছেন যে, পাসপোর্টে খোরশেদের নাম স্বামী হিসেবে ব্যবহার করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জারের স্ক্রিনশট মানুষকে দেখিয়ে বিভিন্ন রকম দাবি করতে থাকেন তিনি।
ওই নারীর পরিচয় দিতে গিয়ে খোরশেদ বলেন, তার নাম সাইদা আক্তার। এরই মধ্যে তার তিনটি বিয়ে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এক মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গে তার পরিচয় আছে।
তিনি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে মানুষকে জিম্মি করেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলে বিভিন্ন স্ক্রিনশটকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।
শনিবার রাতে সস্ত্রীক নিজের ফেসবুকে লাইভে এসে এমনটিই দাবি করেছেন খোরশেদ ও তার স্ত্রী। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে খোরশেদ কয়েক দফা ডুকরে কেঁদে ওঠেন এবং প্রশাসন ও রাষ্ট্রের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
ফেসবুক লাইভে খোরশেদের পাশেই ছিলেন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। লাইভের শেষের দিকে তিনিও কথা বলেন এবং তার স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন রাষ্ট্রের কাছে।
লাইভে কাউন্সিলর খোরশেদ জানান, আমি করোনার শুরু থেকেই আক্রান্তদের সেবা প্রদান করি ও সম্মুখে থেকে লড়াই করি, দাফন-সৎকার করি। একপর্যায়ে গত মে মাসে আমি ও আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হই। এ সময় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রীকে একপর্যায়ে আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়।
তখনই মনে হয় অক্সিজেনের জন্য করোনায় আক্রান্ত যারা সমস্যায় পড়বেন তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেব বিনামূল্যে। এ সময় একটি সংবাদের নিচে এ নারী কমেন্ট করে তিনি অক্সিজেন দিতে চায় এবং আমার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়। তখন থেকেই তিনি আমার সঙ্গে ফেসবুকে কানেকটেড হয় এবং কথা বলা শুরু করে।
একপর্যায়ে আমি বুঝতে পারি তার মতলব ভিন্ন এবং আমি তাকে তখন দূরে সরাতে চেষ্টা করি এবং বোঝাই। তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকেও আমি ঘটনা জানাই, তখন সে আমাকে বলে তার মা হয়তো দুষ্টুমি করছে এ রকম কিছু সম্ভব নয়। তাতেও কাজ হবে না বুঝে আমি নভেম্বর-ডিসেম্বরে তার ভগ্নিপতিকে জানাই। এতে ওই নারী আরও ক্ষুব্ধ হয় এবং আমার পেছনে ওঠেপড়ে লাগে।