নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : বহুল আলোচিত ফতুল্লা মাসদাইর এলাকার শিশু সিয়াম (১০) হত্যাকান্ড রায়ে ৩ জনকে যাবজ্জীবন এবং ৩ জনকে বেখসুর খালাস দিয়েছে আদালত। সোমবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক মো. আনিছুর রহমান এ রায় ঘোষনা দেন। দন্ডিত আসামীরা হলেন, মাসদাইর এলাকার ফারুক মন্ডলের ছেলে মেহেদী মন্ডল, একই এলাকার আরমান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল মতিনের ছেলে ভ্যানচালক আসলাম ও শ্রমিক মো. হালিম। এদের মধ্যে আসলাম পলাতক রয়েছে।
এছাড়াও উল্লেখিত ৩ আসামীকে ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন ও ২০১ ধারায় ৭ বছরের স্বশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। অন্যান্য খালাস প্রাপ্তরা হলো- মাসদাইর এলাকার ফারুক মন্ডল, স্ত্রী মেরিনা মন্ডল ও বিপ¬ব। এবিষয় নিশ্চিত করে নিহত সিয়ামের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এড. ওয়াজেদ আলী খোকন এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং উচ্চ আদালতে আবেদনের সিদ্ধান্ত জানায়।
এ ব্যপারে নিহত শিশু সিয়ামের বাবা মোস্তাফা মাদবর আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এভাবে আমার ছেলেকে মারলো অথচ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলো না। চার্জশীটে স্পষ্ট আছে ও আসামীরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হত্যার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবী করি। আমি ও আমার পরিবার এ রায়ে সন্তুষ্ট না। তাই উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এড. ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, গ্রেফতারকৃত ভ্যানচালক আসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হত্যাকান্ড ও লাশ গুমের বর্ণনা দিয়েছিলো। এরপর গ্রেফতারকৃত মেহেদী মন্ডলও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব। ৩০ দিনের মধ্যেই নথিপত্র উঠিয়ে তা উচ্চ আদালতে প্রেরণ করবো।
এ মামলায় মোট আসামী ৬ জন। প্রধান আসামী মেহেদী মন্ডল, বিপ্লব ও হালিমকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিলো। ভ্যান চালক আসলাম বিদেশ পালিয়ে গেছেন। অপর দুই আসামী ফারুক মন্ডল তার স্ত্রী মেরিনা মন্ডল জামিনে রয়েছেন। এরআগে নারায়নগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ বিচারিক আনিছুর রহমান এর আদালতে আরাফাত রহমান সিয়াম আহম্মেদ হত্যা মামলার রায় ১৩ই আগষ্ট ধার্য তারিখ থাকলেও পরবর্তীতে (৪ সেপ্টেম্বর) রায় ঘোষনার তারিখ ধার্য্য করেছিলেন।
উল্লেখ্য মামলা সূত্রে জানা গেছে, কবুতর কেনার টাকা না দেয়ায় ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর মাসদাইরে আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন সিয়ামকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে মেহেদী মন্ডল। হত্যাকান্ডের পর লাশ গুমে সহযোগিতা করে ঘাতক মেহেদী মন্ডলের বাবা ফারুক মন্ডল ও তার মা মেরিনা মন্ডল। এরপর ২৩ নভেম্বর সিয়ামের বস্তাবন্দী লাশ মুন্সিগঞ্জের শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সিয়ামের বাবা মোস্তফা মাদবর ফতুল্লা মডেল থানায় মেহেদী মন্ডল পিতা ফারুক মন্ডল মা মেরিনা মন্ডল, ভ্যান চালক আসলাম, বিপ্লব ও হালিমকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই হত্যা মামলার আসামীরা হলো মাসদাইর পাকাপুল এলাকার মেহেদী মন্ডল, তার বাবা ফারুক মন্ডল, মা মেরিনা মন্ডল, মাসদাইরের আরমান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল মতিনের ছেলে ভ্যানচালক আসলাম, শ্রমিক হালিম ও বিপ্লবকে। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়।