এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিলেন জেলা প্রশাসন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের কৈশোরকালীন সচেতনতা বৃদ্ধির সহায়ক কেন্দ্র এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ইতিবাচক স্বপ্নময় নারায়ণগঞ্জ বিনির্মাণে জেলা প্রশাসনের অনন্য দশটি উদ্যোগের মধ্যে এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার অন্যতম। ১০ই মার্চ বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো.মোস্তাইন বিল্লাহ। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে নানারকম দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব মো: মনিরুজ্জামান বকাউল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: শামীম বেপারী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: তোফাজ্জল হোসেন, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো: ইমতিয়াজ, সদর ইউএনও নাহিদা বারিকসহ ৫টি উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ডবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, ইসলামী ফাউন্ডেশন উপপরিচালক, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রমুখ।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ কিশোর-কিশোরী রয়েছে। যারা এদেশের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। এই বয়সে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে, যে কারণে তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার মতো কার্যক্রম গ্রহণ করা গেলে এই কিশোর-কিশোরীরা দারিদ্র্য, বৈষম্য ও সহিংসতার চক্র ভেঙ্গে সুশিক্ষিত, সবল ও দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে সচেতন নয়। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রয়োজনীয় পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ) উদযাপন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যভ্যাস, মহামারী (কোভিড-১৯) ও দুর্যোগ মোকাবেলা, নৈতিক শিক্ষা, মাদক ও বাল্যবিবাহ রোধ এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদানের পাশাপাশি রূপকল্প-২০২১ এর রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ সেন্টারের কর্মসূচির আওতায় নারায়ণগঞ্জ জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার প্রত্যেকটিতে একজন ছাত্রী, একজন ছাত্র একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা (সহায়ক শিক্ষক) এবং প্রধান শিক্ষককে উল্লিখিত এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। যার ফলে জেলায় অধ্যয়নরত প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অফিস সহকারি এবং অভিভাবক এই কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে উপকৃত হবে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টার এর কর্মসূচিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে চান। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী, পিতামাতা এমনকি তাদের পাড়া-প্রতিবেশীকে ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, দুর্যোগ, নৈতিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। তাঁরা নিজ বিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘চেঞ্জ মেকার’ হিসেবে কাজ করবে। আগামীতে এসকল শিক্ষার্থীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং উন্নত দেশ গড়ার মূখ্য ভূমিকায় অবর্তীণ হবে। এ কর্মসূচিটি জেলা প্রশাসনের উদ্যাগে বাস্তবায়িত হলেও এটিকে টেকসই করতে স্বাস্থ্য বিভাগ, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য কার্যালয়গুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে।

২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে একটি উন্নত প্রজন্ম গঠনের লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মূল্যবোধ, ও উন্নত নৈতিক মানদন্ডের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী কাঠামো গড়ে তোলাই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। এই কর্মসূচি চলতি বছরের জানুয়ারি শুরু হয়ে দুই বছর মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। উপস্থাপিত এই মডেল বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ একটি সুস্থ ও উন্নত প্রজন্ম উপহার দিতে পারবে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এই কর্মসূচি হবে মুজিববর্ষের অনন্য উপহার। এডোলেসেন্ট কাউন্সেলিং সেন্টারে থাকবে স্যানিটারি প্যাড, আয়রন ট্যাবলেট, ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড ফেলার জন্য ঢাকনাসহ ঝুরি, ফেস মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার, টিস্যু বক্স, নেইল কাটার, স্বাস্থ্যবিধির নির্দশিকা, কাউন্সেলিং ও স্পিচ থেরাপি, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং ও মাদক বন্ধের কর্মকৌশল, নৈতিক শিক্ষার কর্মকৌশল ও এ সংক্রান্ত বই সহ ক্রীড়া সামগ্রী সংরক্ষিত থাকবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত