উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিটিংয়ে !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা নিত্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ডাক্তারদের পরিবর্তে জরুরী বিভাগে রোগী দেখেন সুইপার ও বাবুর্চি। আর টাকা হলেই মেলে সার্টিফিকেট। ডাক্তারদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিনামূল্যের ঔষুধ কিনতে হয় টাকার বিনিময়ে। রোগীদের খাবার দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের পরে। বিড়াল আর তেলাপোকার উৎপাত সর্বত্র।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১০ টায়  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ডাক্তারের দেখা মিলেনি। ঐ সময় হাসপাতালের বর্হিবিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। সরকারি নিয়মানুসারে  ডাক্তারদের অফিস সময় সকাল ৯ টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত থাকলেও কার্যত তারা আসেন সকাল ১০ টায়, চলে যান ১২ টায়। ফলে প্রতিনিয়ত রোগীদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। ডাক্তারদের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, কক্ষের চেয়ার-টেবিল ফ্যানের বাতাস খাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. একেএম সোহেবকে কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। হাসপাতালে দেরি করে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। আমার যখন ইচ্ছা আমি অফিসে আসবো। শুধু সোহেবই নয়, হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্য ডাক্তারদের একই অবস্থা।

সূত্র জানায়, গত ৩ বছর ধরে ডাক্তার সোহেব রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন। তিনি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন বলেই বেশিরভাগ সময়ই তিনি অনুপস্থিত থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার কাছে যেসকল রোগী আসেন কমিশনের বিনিময়ে তাদের তিনি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। এসকল কর্মকান্ড করে তিনি অল্প সময়ে কোটি টাকা মালিক কনে গেছেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান মাহমুদকেও বেলা ১১ টার সময় তার কক্ষে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিতে গেলে এক কর্মকর্তা বলেন, স্যার  নারায়ণগঞ্জ মিটিংয়ে আছেন।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, আইএমসি ও পুষ্টি কর্নার কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ মাহমুদুর রহমান বেলা পৌনে ১১ টায় কক্ষে প্রবেশ করেন। দেরীতে আসার কারন জিজ্ঞাসা কররে তিনি বলেন, আমি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। অথচ তার কক্ষের সামনে রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। গাইনী বিশেষজ্ঞ নাছরিন সুলতানা ও সাদিয়া জেনিফ সকাল সাড়ে ৯ টায় কক্ষে প্রবেশ করেন। দেরি হওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করলে তারা এ ব্যাপারে কোন সদোত্তর দেননি। আরেক গাইনী কনসালটেন্ট সালমা আক্তার ওয়ালিদা মাসের মধ্যে সিংহভাগ সময়ই অনুপস্থিত থাকেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসক সালমা আক্তার ওয়ালিদা দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ একই হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তাছাড়া রোগী রেফার্ড করে কোটিপতি হয়ে যাওয়া এই চিকিৎসক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লোক পরিচয়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের সাথে অসদাচরন ও নানা হুমকি-ধামকী দিয়ে প্রভাব খাটানোর রয়েছে অভিযোগ। হাসপাতালের আয়া রিনা বেগম রোগীদের কাছ থেকে বকশিশের নাম করে নিচ্ছে টাকা। স্বাস্থ্য সহাকারী শিরিনা আক্তার সকাল সাড়ে ১০ টায় তার কক্ষে প্রবেশ করেন। কিন্তু রোগী তার কক্ষের পাশের রোগীদের বিশাল ভীড় রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল দপ্তরে প্রতিদিনই দেখা যায় এমন চিত্র। এতে করে রোগী ভোগান্তির যেন অন্ত নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে কোন মহিলা রোগী দেখার জন্য মহিলা কনসালটেন্ট নেই। এছাড়া হাসপাতালে কোন চক্ষু ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন এখন নিজেই অসুস্থ।

কথা হয় তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া এলাকা থেকে আসা রেহানউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল থেকে থেকে তিনি যক্ষা রোগের ঔষধের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্ত কর্মকর্তা কর্মচারীর কোন দেখা নেই। রেহানউদ্দিনসহ আরো ১০/১৫ জন রোগী হাসপাতালে অপেক্ষমান ছিল।

রোগী তানিয়া আক্তার জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিনামূল্যে সেবার পাওয়ার আশায় হতদরিদ্র রোগীরা সরকারি হাসপাতালে আসে। বিনামূল্যে সেবা নিতে এসে রোগীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। রূপসী এলাকা থেকে আসা বাদশা জানান, কয়েকঘন্টা অপেক্ষা করেও মেডিকেল কনসালটেন্ট তিনি ডা. একেএম সোহেবের দেখা পায় নি। তার কাছে গেলে মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে রোগীদেরকের বেসরকারি হাসপাতালে রের্ফাড করে দেয়। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঔষধ ঠিকভাবে ঔষধ দেয়া হয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও  পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান মাহমুদ জানান, নারায়ণগঞ্জ স্বাস্থ্য বিষয়ক মিটিংয়ে ছিলাম তাই হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে পারিনি।

add-content

আরও খবর

পঠিত