নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে ৫৭ ধারা মামলার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে করে গত কয়েক মাসে নারায়ণগঞ্জের ছয় সাংবাদিকসহ দেশের ২৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই মামলা হওয়ার পর পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে এখন আতংক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এসব মামলার অধিকাংশই ক্ষমতাসীনদের প্রভাবের কারণে পুলিশ গ্রহন করতেও অনেকটা বাধ্য হচ্ছে । আর নারায়ণগঞ্জে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের কৃত মামলার অধিকাংশই ক্ষোভের বশিভূত হয়ে করা হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।
পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় যত মামলা হচ্ছে তার অধিকাংশই থানা পর্যায়ে। যা নিয়ে খোদ পুলিশ সদস্যরাও বিরক্ত। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা যাতে অপপ্রয়োগ না হয় এবং পেশাদার সাংবাদিকরা যাতে হয়রানী না হয় এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলার পরও মামলা হচ্ছে। সাংবাদিকরা যা দেখে তাই লিখে। কখনো কখনো তথ্যগত ভুল যে হয় না, তা নয়। পেশাদার সাংবাদিকদের কাজ করতে গিয়ে তথ্যগত ভুল হয়ে থাকলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি প্রতিবাদ দিতে পারে।
কিন্তু দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জে তথ্যগত ভুল যা সামান্য বলা চলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আসার পর পরই সেই সংবাদের ভুল সংশোধনীসহ দু:খ প্রকাশ করার পরও এই নারায়ণগঞ্জে এই ধরনের মামলার ঘটনা ঘটেছে। আবার স্থানীয় প্রতিনিধিকে প্রকাশিত সংবাদের জন্য আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় আসামী করা হলেও সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককে মামলায় জড়ানো হয়নি। যা স্পষ্ট বুঝা যায় ব্যাক্তিগত আক্রোশ কিংবা অন্য কোন কারণে এই মামলা গুলো হয়েছে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা মূলত সাইবার অপরাধ রোধে এই আইনটি করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান যুগে প্রায় সকল পত্রিকারই নিজস্ব ওয়েব সাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে কোন পত্রিকার কাউকে হেয় করার জন্য ওয়েব সাইট বা ফেসবুকে কোন সংবাদ আপলোড করে না। কিংবা কারো মানহানিকর কর্মকান্ডে কোন পেশাদার সাংবাদিক এ ধরণের কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় না। তার পরও গত ছয় মাসে ২৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হওয়ায় সাংবাদিক সমাজ উদ্বিগ্ন।
ব্যবসার নাম করে ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম জহিরের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ এক প্রতারক হাতিয়ে নিলে দৈনিক ডান্ডিবার্তায় পুলিশের সূত্রেপ্রাপ্ত রিপোর্টে জহিরের স্থলে রিপনের নাম ছাপা হয়। পরবর্তিতে বিষয়টি ডান্ডিবার্তা কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তাৎক্ষনিক ভাবে প্রকাশিত সংবাদের সংশোধনী প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়। তার পরও ডান্ডিবার্তা সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়। এছাড়াও একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ এ সংবাদটি প্রত্যাহার করে দু:খ প্রকাশ করে। তাছাড়া যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিলো তা প্রকাশনা আইন অনুযায়ী বাদী আলী রেজা রিপনের বক্তব্যও নিয়ে তা হুবুহু সংবাদটি প্রকাশ করেছে। যা কোন মানহানী বা উদ্দেশ্যপনোদিত নয়। এটাও দু:খ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়া হয়। তারপরেও বিভিন্ন লোক মারফত মামলা হবে না বলে ৪দিন পরে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ এর প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ও নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ হাসান কচিকে বিবাদী করে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় জড়ানো হয়। এছাড়া একই সংবাদের সূত্র ধরে, নারায়ণগঞ্জের আলো পত্রিকার সম্পাদক রাজু আহম্মেদ ও প্রকাশক মোবারক হোসেন কমলের বিরুদ্ধে আদালতে মান হানির মামলা হয়। রাজু আহম্মেদের বিরুদ্ধে দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের কারণে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হলেও এক্ষেত্রে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও প্রকাশককে মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। অন্যদিকে দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার সম্পাদক আবু আল মোরছালিন বাবলা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা মামলাটিতে নারায়ণগঞ্জে প্রথম বিবাদী হয়।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাটি অপপ্রয়োগ শুরু হলে খোদ আইনমন্ত্রী বলেন, আইনটি পত্যাহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের বিবেকবানরা এই মামলাটি প্রত্যাহারসহ ক্ষমতার দাপটে যাতে সাংবাদিকদের হয়রানী করা না হয় এদাবী জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী নিজেও এই মামলাটি নিয়ে অনেকটা বিব্রত বলে জানাগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের প্রতি আলাদা দূর্বলতা থাকার পরও গত ছয় মাসে অধিক সংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইনের মামলা রুজু হওয়ায় অচিরেই আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এ আইনটি কার্যকর না হয় সে ব্যাপারে মত দিয়েছেন।
২রা আগস্ট বুধবারও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অপ্রয়োগ বন্ধ হওয়া জরুরী বলে মন্তব্য করে বলেছেন, সাইবার ক্রইম নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫৭ ধারা করা হয়েছিল। কিন্তু তুচ্ছ কারণে এর অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। তুচ্ছ কারণেও এই ধারার অপব্যাপহার হচ্ছে। তিনি তথ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আহবান জানিয়ে বলেন, এ আইন বাদ দেয়ার আগে এর অপব্যবহার ঠেকাতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের পেশাদার সাংবাদিকরা মনে করেন কোন প্রভাবশালী মহল যেন প্রভাব খাটিয়ে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাসহ সকল কালাকানুন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে না হয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কারণ আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে পেশাদার সাংবাদিকরা এখন অনেকটা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কি কারণে, কে কখন মানহানির শিকার হলো এনিয়ে পেশাদার সংবাদিকরা চিন্তিত।