স্কুল ছাত্র সিয়াম হত্যার রায় পিছিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার শিশু সিয়াম হত্যা মামলার রায় পিছিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর দেয়া হেয়েছ। ১৩ আগস্ট রায় ঘোষনার কথা থাকলেও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান আগামী ৪ সেপ্টেম্বর এই রায় ঘোষনার দিন ধার্য করেন।

বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী এড. ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, ১৩ আগস্ট রায় ঘোষনা দিন ধার্য থাকলেও মামলাটি চাঞ্চল্যযকর ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখনও রায় লেখা শেষ কিরতে পারেননি। তাই এইদিন রায় ঘোষনা করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো জানান, হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর তিন কার্য দিবসের মধ্যে রায়ের রেকর্ড হাইকোর্টে পাঠাতে হয় বিধায় আদালত আগামী ৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার নতুন দিন ধার্য করেছেন।

হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে বলেন, মূলত কবুতর কেনার টাকা না দেয়ায় ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর মাসদাইরে আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন সিয়ামকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে একই এলাকার মেহেদী মন্ডল। হত্যাকান্ডের সময়ে ও পরে লাশ গুমে সহযোগিতা করে ঘাতক মেহেদী মন্ডলের বাবা ফারুক মন্ডল ও তার মা মেরিনা মন্ডল। এরপর ২৩ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের শান্তিনগর এলাকা থেকে সিয়ামের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহত সিয়ামের বাবা মাসদাইর এলাকার মোস্তফা মাতবর বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামীরা ছিল, মাসদাইর পাকাপুল এলাকার মেহেদী মন্ডল, তার বাবা ফারুক মন্ডল, মা মেরিনা মন্ডল, মাসদাইরের আরমান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল মতিনের পুত্র ভ্যানচালক আসলাম, শ্রমিক হালিম ও বিপ্লব। আসামীদের মধ্যে মেহেদী মন্ডল, হালিম ও বিপ্লব কারাগারে এবং মেহেদীর বাবা ফারুক মন্ডল ও মা মেরিনা মন্ডল জামিনে আছেন। আর মামলার আরেক আসামী আসলাম বিদেশে পালিয়ে গেছে।

এড. ওয়াজেদ আলী আরো জানান, স্কুল ছাত্র সিয়াম হত্যা মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২২ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণসহ যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারায় আদালত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

জানাগেছে, সিয়াম হত্যা মামলাটির প্রথমে তদন্তভার পেয়েছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার এস আই সোহেল আলম। তিনি বদলী হওয়ার পরে তদন্তের দায়িত্ব পান এস আই মো: আবুল বাশার। পরবর্তীতে দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই গোলাম মোস্তফা উক্ত মামলায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে তিনি ২৯ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছিল, বিগত ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর সিয়ামকে নিজ বাড়ীতে ডেকে নেয়ার পরে মেহেদী তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে সিয়ামের বুকে আঘাত করলে সিয়াম চিৎকার করার চেষ্টা করলে মেহেদীর মা মেরিনা মন্ডল সিয়ামের মুখ এক হাতে চাপা দিয়ে রেখে অপর হাতে মোবাইলে তার স্বামী ফারুক মন্ডলকে ফোন করে ঘটনাটি জানায়।

তখন ফারুক মন্ডল মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিল। স্ত্রী মেরিনা মন্ডলের ফোন পেয়েই ফারুক মন্ডল তাৎক্ষনিক বাড়ীতে ফিরলে তার সামনেই আবার সিয়ামের বুকে চাকু দিয়ে আঘাত করে মেহেদী। কিন্তু তখন ফারুক মন্ডল ও মেরিনা মন্ডল ছেলে মেহেদীকে বাঁধা না দিয়ে এবং ছুরিকাহত সিয়ামকে হাসপাতালে না নিয়ে ফারুক মন্ডল সিয়ামের মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উল্টো গলা চেপে ধরেন এবং তাঁর পরিহিত লুঙ্গি দ্বারা সিয়ামের ক্ষতস্থানে চেপে ধরে রক্ত থামানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সিয়াম মৃত্যুবরণ করে। পরে মেরিনা বেগমের পরামর্শে মেহেদীর বাবা ফারুক মন্ডলের লুঙ্গি দিয়ে পেঁচিয়ে আমের ঝুঁড়িতে ভরে বস্তাবন্দি করে সিয়ামের লাশ আসলামের ভ্যান গাড়ীতে করে মুন্সীগঞ্জের মোক্তারপুরে শান্তিনগর এলাকাতে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়। মেহেদী মন্ডলের পরিকল্পনায় এ কিলিং মিশনে থাকা হালিম বিপ্লব ও আসলামকে ১২ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল।

আসামী গ্রেফতারকৃত ভ্যান চালক আসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকান্ড ও লাশ গুমের বর্ণনা দেন। এরপর গ্রেফতারকৃত মূলহোতা মেহেদী মন্ডলও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মেহেদী মন্ডল তার পিতা মাতাকে বাঁচাতে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সিয়াম হত্যাকান্ডে জড়িত হিসেবে ৩ জন ব্যাক্তি নাদিম, অপু ও রাসেলের নাম উল্লেখ করেন। তবে পুলিশের তদন্তে উল্লেখিতদের হত্যাকান্ডের সাথে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি।

add-content

আরও খবর

পঠিত