নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : চাঁদার দাবীতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ৬জন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল (ক) ইমরান সিদ্দিক মেহেদী। রবিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকাস্থ ক্রাউন সিমেন্ট কোম্পানির সামনে তিনি এ ঘটনার সার্বিক অনুসন্ধান করেন। এর আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুমের কাছ থেকে দাবীকৃত চাঁদা না পাওয়ায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় আহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসে চাঁদাবাজদের কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান সিদ্দিক মেহেদী। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করবে এতে আমরা সার্বিক সহযোগীতা করবো। যদি কেউ চাঁদা চায় তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বাসায় কিংবা বাহিরে যেখানেই পালিয়ে থাকুক আমরা খুঁজে বের করবো। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ জনগনের জানমাল রক্ষায় দিনরাত কাজ করছে। যেকোন অপরাধ সংগঠিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন আমরা চলে আসবো। তাছাড়াও যেকোন অপরাধের তথ্য দিতে স্থানীয়দের মাঝে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান সিদ্দিক মেহেদী তার ভিজিটিং কার্ড ও মোবাইলে ব্যবহৃত নাম্বারটি দিয়ে আসেন।
জানা গেছে, ক্রাউন সিমেন্ট কোম্পানির সাথে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবৎ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে সৈয়দপুর এলাকার হাজী আব্দুস সাত্তার এর বড় ছেলে মো. মাসুম। মঙ্গলবার সকালে মাসুম সহ আহতরা সিমেন্ট কোম্পানিতে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে গেলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা নারায়ণগঞ্জ- মুন্সিগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী খোকন মেম্বারের সন্ত্রাসী বাহিনীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাঠি ও লোহার পাইপ দ্বারা অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় সৈয়দপুর এলাকার মো. জুম্মন (৩০), মো. নয়ন (২৭) এবং মামুন (৩০) গুরুতর রক্তাক্ত জখম সহ ৬/৭ জন আহত হয়। এদের মধ্যে মো. জুম্মন এবং মো. নয়নের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মো. মাসুম জানায়, প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা দিয়েও খোকন মেম্বারের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের নানাভাবে চাঁদার জন্য হুমকি প্রদান করে। আমরা এদের যন্ত্রনায় ব্যবসা করতে পারছিনা। বিভিন্ন সময় নানা অযুহাতে তারা চাঁদা নিয়ে যায়। এরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা। যাদের নিয়ন্ত্রণ করে খোকন মেম্বার।
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক বিষয় নিয়ে আমি যখন কোম্পানীর কনফারেন্স রুমে ছিলাম। ওই সময় আমার ছোট ভাই ও আমার ব্যবসায়ীক সহযোগীরা একটি দোকানে চা খাচ্ছিল। অল্পের জন্য আমি রক্ষা পেলেও ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পিছন থেকে আমার লোকের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আমি এখানে ব্যবসা করতে এসছি, মারামারি করতে না। র্দীঘ আট বছর যাবৎ শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু মেনে ব্যবসা করছি। কিন্তু তাদের চাঁদাবাজীর কারণে আমি অতিষ্ট। আমি এই চিহ্নিত চাঁদাবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান সিদ্দিক মেহেদী মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানায়, আজ আমি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। অভিযুক্তরা বিভিন্নস্থানে পালিয়ে রয়েছে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে। এছাড়াও জেলা পুলিশ সুপারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে মাদক, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের ব্যপারে কোন ছাড় নেই। ব্যবসায়ীরা র্নিবিঘেœ যেন ব্যবসা করতে পারে এজন্য পুলিশকে সার্বিক সহযোগীতা করতে বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহীকতায় ব্যবসায়ী মাসুমের অভিযোগের ভিত্তিতে দুপুরে চর সৈয়দ পুর এলাকায় ঘটনাস্থলে যাই।
উল্লেখ্য, এঘটনায় গত মঙ্গলবার ( ২০ আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগী ব্যাবসায়ী মো. মাসুম বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে অভিযুক্ত করেছে। যার মামলা নং- ৩৪১৪(৩)/২, তারিখ ২০/০৮/২০১৯। মামলার অভিযুক্তরা হলো, ১। মো. অপু, পিতা- সিরাজ মিয়া, ২। আবুল (৩৫), ৩। বাবুল (৪০) উভয় পিতা- ইয়াকুব, ৪। মাঈন উদ্দিন (৪০), পিতা- খালেক, ৫। শাহীন (২৯), পিতা- গোলাপ, ৬। আনিছ (২৯), ৭। পারভেজ (২২), উভয় পিতা- মৃত সিদ্দিক মিয়া, ৮। রহিম বাদশা (৩১), পিতা- আলী আক্কাস, ৯। সানি (২৫), পিতা- ইসমাঈল, ১০। রফিকুল (৩৩), পিতা- ইউনুস, ১১। ফারুক (২৮), পিতা আলী আকবর, ১২। ফাহিম (২২), পিতা- বাবুল, ১৩। আলতাব (২৭), পিতা- ধনু মিয়া, সর্ব সাং- চর সন্তোষপুর, পশ্চিম মোক্তারপুর, থানা ও জেলা মুন্সিগঞ্জ সহ আরো ১০/১৫ জন অজ্ঞাতনামা। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার (অফিসার ইনচার্জ তদন্ত) ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত এজাহারে সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শাহাদাৎ হোসেনকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।