সমঝোতা : ডাক্তার থানা থেকে বাড়ীতে, প্রসূতি কবরে !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যপক সমালোচিত নগরীর মেডিস্টার জেনারেল হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার সাদিয়া জাহান ঝুমা নামের এক প্রসূতি চিকিৎসাধীন মৃত্যু ঘটে। স্বজনদের দাবি ভুল চিকিৎসার কারণে প্রসূতি মারা গেছেন। তবে মৃত্যুর এ ঘটনাই প্রথম নয়। এখানে চিকিৎসাধীন নানা ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসায় তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাকিব হারিয়েছে তার বাকশক্তি।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মেডিস্টারে সাকিবের নাকে অপারেশন করানোর জন্য ভর্তি করানো হয়। অপারেশনের পরই সে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ভুল চিকিৎসার শিকার সাকিব নারায়ণগঞ্জের বন্দরের চৌরাপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। এছাড়াও ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে একই হাসপাতালে ডাক্তারের অবহেলার কারণে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছিলো সময়মত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে নবজাতকটি মারা যায়। কেরানীগঞ্জের কাওটাইলের বাসিন্দা প্রবাসী আহসান হাবীবের স্ত্রী অন্ত:সত্ত্বা সুলতানা আক্তার বেবী সেদিন ওই শিশুটির জন্ম দেন। তিনি ডা. অমল কুমার পোদ্দারের তত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদিকে গেল বছর নভেম্বরের দিকে এই মেডিস্টার জেনারেল হাসপাতালে আজান নামে ১৯ মাস বয়সী এক শিশু ভুল চিকিৎসার শিকারে হয়ে মারা যায়। আর সর্বশেষ ঝুমা নামের এক প্রসূতি চিকিৎসাধীন মৃত্যুতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আর এ ঘটনার পর ক্ষোভে উত্তাল ঝুমার স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুরসহ সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রসূতির গর্ভপাতের সময় অপারেশন থিয়েটারে থাকা গাইনী ডাক্তার অমল কুমার রায়, তার সহযোগী ডাক্তার বদরুদ্দোজা এবং ওটি সিস্টার মুনা (৩০), ঝর্ণা (২৮) ও মৌসুমী (৩০) কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আর প্রসূতির লাশটি হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও তা ফ্রিজবাহী এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে রাখেন থানায়।

দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘন্টা যাবত ফ্রিজবাহী এ্যাম্বুলেন্সে পড়েছিল প্রসূতির নিথর দেহ। কিন্তু তাতে কি, যেই ডাক্তারের দায়িত্ব অবহেলার কারনে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছিল ঝুমাকে, সেই ডাক্তার অমল রায় ঐ ১২ ঘন্টা থানার ভেতরে ছিল জামাই আদরে। দিন থেকে মধ্যরাত অবদি চিকিৎসক সংগঠনের নেতা থেকে উচ্চ পর্যায়ের সরকারী আমলা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ব্যাক্তির তদ্বির প্রচেষ্টার পর বহু নাটকীয়তা শেষে সমঝোতায় এই গাইনী ঘাতক বাড়ী ফিরেন স্বাচ্ছন্দে। আর স্বজনদের অশ্রুজলে দুর্ভাগা প্রসূতি ঝুমার ঠাঁই মিলে কবরে।

এরপর রাতে সদর মডেল থানায় গিয়ে দেখা গেছে, গাইনী ঘাতক অমল রায়কে বাঁচাতে তদ্বির করতে থানায় আসেন বিএমএ জেলা সভাপতি ডা. শাহনেওয়াজ, স্বাচিপ নেতা, নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর আলম, কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা এড. মন্টু ঘোষ, পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মেডিনোভা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষ সহ আরো অনেকে।

এছাড়াও সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবদি চলছিলো তদ্বির। নারায়ণগঞ্জের পূর্বতন একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাঞ্জারুল মান্নান এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের থেকে জনৈক কর্মকর্তা অমল রায়ের মুক্তির জন্য তদ্বির করেন বলে জানাযায়।

দীর্ঘ সমঝোতার পর রাত ১ টায় প্রসূতি ঝুমার স্বামী কামরুল হাসান শরীফ ও তার শ্বশুর থানায় এসে আপোষনামা নিয়ে ঝুমার লাশ নিয়ে যান। আর অবহেলার দায়ের আটক ডাক্তারসহ ৫ জন সহসাই মুক্তি পেয়ে যান।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে সদর মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম পিপিএম জানান, থানার বাহিরে উভয়পক্ষের সমঝোতার পর প্রসূতির স্বামী আপোষনামা দাখিল করায় তাকে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষ আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করতাম। যেহেতু নিহতের পরিবারের কোন অভিযোগ নেই ডাক্তার অমল রায়সহ অন্যান্যদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় ১০ মাস যাবত নারায়ণগঞ্জের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. অমল রায়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন নগরীর উত্তর মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান শরীফের স্ত্রী সাবিহা তাসমিয়া ঝুমা। গত ৮ মার্চ ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার প্রসব বেদনা উঠলে তাকে মেডিস্টার জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করানোর পর সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে ডাক্তার অমল রায়ের তত্ত্বাবধানে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরন হলে সকাল ১১ টায় অত্র হাসপাতালের ডাক্তারগন বোর্ড মিটিংয়ে বসে তার স্বজনদের জানান, রোগীর রক্তক্ষরন হচ্ছে, তার জরায়ু কেঁটে ফেলতে হবে। তবে ৭ ব্যাগ রক্ত লাগবে। এ সময় প্রসূতির সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে তার স্বজনরা ৭ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু দুপুর ২ টায় চিকিৎসক জানান রোগীনির মৃত্যু হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত