নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : অসাম্প্রদায়িকতার এক অন্যন্য উদাহরন সৃষ্টি মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থ স্থান লাঙ্গলবন্দে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি নতুন ঘাট নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। লাঙ্গলবন্দ স্নান ঘাট এলাকাকে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে বর্তমান সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় ১৩ অক্টোবর শনিবার বিকাল ৪ টায় বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলবন্দে বিষ্ণুপ্রিয়া ঘাট নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আজকে লাঙ্গলবন্দে উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে বন্দরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। মঞ্চের সামনে যারা বসে আছেন তাদের সিথিতে সিদুর দেওয়া আর বাইরে যারা ভীড় করেছেন তারা সবাই হেজাব পড়া। আজকের ক্ষেত্রটা দেখে মনে হচ্ছে হিন্দু মুসলিম কোন পরিচয় নয় আমরা সবাই বাঙ্গালী। যেমনটা ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ স্বাধীন করেছে। আজকের মত ঠিক এই ভাবে সবাই মিলে সমাজকে নিরাপদ রাখতে হবে। আর লাঙ্গলবন্দ থেকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি আরো বলেন, লাঙ্গলবন্দ হিন্দুরা বছরে মাত্র ২ দিনের জন্য ব্যবহার করেন। বাকি সময়টা মানুষের জন্য ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লাঙ্গলবন্দকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। আর সেই মানুষ গুলো আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম।
বন্দরকে ফুলের নগরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দর হচ্ছে ফুলের শহর। সাবদীতে বাহারী ফুলের চাষ হয়। আগামী ফুলের মৌসুমে বন্দরে ফুল মেলার আয়োজন করা হবে। সাবদীতেও পূর্ণ্য স্নান অনুষ্ঠিত হয়। তাই সাবদীকেও আমরা সাজাবো। বন্দরে উৎপাদিত ফুলের কথা আমরা সারা বাংলাদেশকে জানাতে চাই।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন এখনো অনেক সময় বাকি। বাকি সময়ে আমি সকল সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বাকি উন্নয়ন কাজ গুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমি অপরাজনীতি থেকে মুক্তি চাই। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাই। উন্নয়ন দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে খুশি করতে না পারলে ভোট চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের যে যাত্রা শুরু করেছেন সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় লাঙ্গলবন্দের উন্নয়ন হচ্ছে। আগামীতে আবারো বর্তমান সরকারকে অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিঞা বলেন, সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সহযোগীতায় সরকার লাঙ্গলবন্দে ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। যার মধ্যে ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আজকে লাঙ্গলবন্দে ১২০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন হচ্ছে। সামনে আরো ১২০ কোটি টাকার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হবে লাঙ্গলবন্দে। বর্তমান সরকার আগামীতেও অব্যাহত থাকতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের মাধ্যমেই ১২০০ কোটি উন্নয়ন লাঙ্গলবন্দে হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী এমপি সেলিম ওসমানকে আবারো সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চেয়ে উপস্থিত সকলের মতামত জানতে চান। এসময় সকলে সেলিম ওসমানকে আবারো এমপি নির্বাচিত করার কথা বললে মোহাম্মদ আলী বলেন, আগামী অ্যাডভোকেট খোকন সাহার মাধ্যমেই নির্বাচন পরিচালিত হবে।
এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, আমাদের তীর্থ স্থান লাঙ্গলবন্দের যত উন্নয়ন হয়েছে তার অবদান বর্তমান সাংসদের পরিবারের সদস্যদের। প্রথমে প্রয়াত নাসিম ওসমানের মাধ্যমে লাঙ্গলবন্দের উন্নয়ন হয়েছে আর এখন সেলিম ওসমানের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হতে যাচ্ছে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্র্রীতির এক অটুট বন্ধন। আমরা এই বন্ধনকে ভবিষ্যতেও অটুট রাখতে চাই। তাই আমরা এমপি সেলিম ওসমানের সুস্থ্য কামনা করে দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি আগামীতে উনাকেই আবারো এমপি হিসেবে পেতে চাই।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, হিন্দু বৌদ্ধ খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গোপি নাথ দাস, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিতোষ সাহা, মেট্রো গ্রুপের স্বত্তাধিকারী অমল পোদ্দার, লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি শংকর সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা, মহানগরের সভাপতি দিপক সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।