নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব সংবাদ দাতা) : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্প নগরীতে উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে ফকির এপারেল্স ওয়্যার নামের একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এসময় ২০/২৫ টি কারখানায় তারা ভাংচুর চালায়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বাঁধা দিলে শ্রমিকদের সাথে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিল্প পুলিশের একজন সহকারি পুলিশ সুপার, ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ও শ্রমিক সহ প্রায় ৪০ জন আহত হয়।
সোমবার (৩রা ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সংর্ঘষ চলতে থাকে। এদিকে সংর্ঘষ চলাকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফতুল্লা থানা পুলিশ ও ইন্ডস্ট্রিয়াল পুলিশ দুপুর পৌনে ১টার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে বিসিক এলাকায় মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে সকল প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ প্রসঙ্গে এমবি নীট ফ্যাশন লি. এর মালিক ও বিসিক শিল্প নগরী মালিক সমিতির সভাপতি মো. হাতেম মিয়া জানান, উৎপাদান মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে ফকির এপারেল্স ওয়্যার কারখানার শ্রকিদের মধ্যে গত তিনদিন ধরে অসন্তোষ চলছিল। মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধি করলেও দাবী অনুযায়ী বৃদ্ধি না হওয়ায় শ্রমিকরা রবিবার কারখানাটির অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করে। অসন্তোষ নিরসনে কারখানাটির মালিকপক্ষ সকালে বিসিক ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। তারা আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিভিন্ন কারাখানার মালিকদের সাথে আলোচনা করে তাদের সাথে উৎপাদন মজুরি সমন্বয় করার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা না মেনে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে এ বিক্ষোভ পুরো বিসিকে ছড়িয়ে পড়লে বিশেষ পোশাকধারী বহিরাগত শতাধিক যুবক এসে শ্রমিকদের সাথে যোগ দেয়। এসময় তারা বিসিকসহ আশপাশের ২০ থেকে ২৫টি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
তিনি আরো জানান, এ হামলায় আমার প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি গাড়ি ও আমার নিজের ব্যবহৃত গাড়িটিও ভাংচুর করে। এ ঘটনার খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লাা থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা পুলিশের চড়াও হলে শুরু হয় শ্রমিক-পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। তিনি জানান, শ্রমিকদের সাথে যোগ দেওয়া বহিরাগতদের লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ। এসময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
অপরদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি অংশ জানায়, ফকির গার্মেন্টসে সম্প্রতি একটি চায়না মেশিন আনা হয়েছে। যে কাজ গুলো ৫ থেকে ৭ জন অপারেটর ও হেলপার করতো তা এই মেশিনের মাধ্যমে একজন অপারেপর দিয়েই করা সম্ভব। এতে করে শ্রমিক ছাটাই ও মজুরী কমার আশংকায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠে।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুব-উন-নবী জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য শ্রমিকদের বোঝাতে চেষ্টা করে। তবে শ্রমিকদের মধ্যে বহিরাগত শতাধিক যুবক মিলে গিয়ে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা করে। শ্রমিকদের হামলায় শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লা থানার পুলিশ কর্মকর্তা বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। এতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে বহিরাগতদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।
তিনি আরো জানান, পুলিশের উপর হামলা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার ব্যাপারে তদন্ত কাজ চলছে। তাদেরকে শনাক্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।