নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : মঙ্গলবার পহেলা ফাল্গুন। ষড়ঋতুর বৈচিত্রময়তায় ছিল ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী দিন। অভিন্ন এক অনুভূতিতে এদিন ভেসেছে ভাটিবাংলা থেকে সারাবাংলা- ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/আমার বাড়ি আসে।’ যে প্রাণখোলা বুনো আনন্দে একদিন দুলেছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম, সেই আনন্দ ছিল সবার।
ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, রঙিন করেছে আবহমান কাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণ। তাই পহেলা ফাল্গুনের এ দোলা জাগানো দিনে তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে, তরুণরা পাঞ্জাবি-পাজামা কিংবা ফতুয়ায় খুঁজে নেয় শাশ্বত বাঙালিয়ানা। বসন্তের প্রথম দিনে তাই উৎসবের হাওয়ায় তরুণ-তরুণীদের ভাসতে দেখা গেছে হলুদ, লাল আর সবুজ কম্বিনেশনের শাড়ী পড়া মেয়েদের সংখ্যা রাস্তায় ছিল বহু। উপলক্ষ পহেলা ফাল্গুন। বাঙালীর বসন্ত উৎসব। এদিন কানে বা চুলে একটু ফুল গুজে না দিলে তাদের এই সাজগোজ যেন ঠিক সম্পন্ন হয়না।
আর বিশেষ দিবসকে মাথায় রেখে প্রিয়জনকে উপহার দিতেও অনেকে ফুল কিনেছেন। সেই সাথে আজ রয়েছে ভালবাসা দিবস। গোলাপ ফুলের চাহিদাই ক্রেতাদের মধ্যে সবচাইতে বেশি। এছাড়া গ্লাডিওলাস, গাঁদা আর রজনীগন্ধাও ক্রেতাদের প্রিয়। আবার বসন্তকে বলা হয় প্রেমের ঋতু। মাতাল করা নানা ফুলের সৌরভে মানব হৃদয়ে পূর্ণতা পায় প্রেমের অনুভূতি। বসন্ত যেন সব বাধা ভেঙে দিয়ে প্রিয়তমার হাত ধরে বলতে চায়- ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/আমার আপনহারা প্রাণ/আমার বাঁধনছেঁড়া প্রাণ/তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/তোমাকে অশোকে-কিংশুকে/অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণে সুখ।’ অথবা শচীন দেব বর্মনের মতো করে গেয়ে উঠবে- ‘শোন গো দখিনা হাওয়া/প্রেমে পড়েছি আমি।’ শুধু প্রাণের দুরন্ত আবেগ আর প্রেমে নয়, এ ঋতুতে বাংলার মানুষ জেগে ওঠে দ্রোহে-প্রতিবাদে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বার্তা ছড়ায়, ‘এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে/খুনেরা ফাগুন।’
মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার চেয়ে বাংলার তরুণরা রক্ত ঝরিয়েছে এ ঋতুতে। আবার সামরিক-স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়েও রক্ত ঝরিয়েছে এই বসন্তে। তাই ফাল্গুনের দ্বিতীয় দিন ‘সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্র দিবস!’ শীতের রুক্ষ, হিমেল দিনের অবসান ঘটিয়ে জেগে উঠল বসন্ত। কবির ভাষায় ‘মধুর বসন্ত এসেছে, আমাদের মধুর মিলন ঘটাতে।’ বসন্তের এই প্রেমাবেগে দূর মফস্বলেও ছড়িয়ে পড়েছে তারুণ্যের এই যাত্রা। ফোনে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চলছে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।