পুলিশ সুপার বরাবর না.গঞ্জ মহানগর জাসদের স্মারকলিপি প্রদান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব সংবাদ দাতা ) : পুলিশের কাছে প্রতিকার প্রার্থীদের প্রতি অবহেলা ও হয়রানি বন্ধ, প্রতিকারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাসদ। ২৪ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাসদ-  কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাসদের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান এর নেতৃত্বে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশের বিরাজিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা ও দূর্বলতাসহ বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন, আইন শৃংখলা রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ পুলিশ, বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক ও জঙ্গীবাদী সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত, নাশকতা, সহিংসতা, আগুন সন্ত্রাস, আগুন যুদ্ধ, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, হত্যা, মাদক দমনসহ রাজনৈতিক অশান্তি দমন ও নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। চাঞ্চল্যকর অপরাধের হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। ক্ষেত্র বিশেষ কিছু ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের এসব কৃতিত্ব ও সাফল্য কিছু কারণে স্লান হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতিকার পাবার আশায় পুলিশ, থানা, ফাড়ি, ক্যাম্পে গিয়ে অবহেলা ও হয়রানীর শিকার হওয়া স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

কোনো অপরাধের ঘটনা বা অপরাধ সংগঠনের আশংকার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদান করা হলে পুলিশ পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করে। এ বিলম্বের ফলে জান মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। সাধারণ প্রতিকার প্রার্থী কর্তৃক সুনির্দিষ্ট অভিযোগেও এজাহার লিপিবদ্ধ করতে অনেক বেগ পেতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষ প্রভাবশালীদের সাহায্য ছাড়া এজাহার দায়ের করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। আর অভিযুক্ত যদি প্রভাবশালী কেউ হয়ে থাকে তাহলে এজাহার দায়ের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। মামলার তদন্ত কাজে সময়ক্ষেপণ করা, মামলা তদন্তে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা, তদন্তে প্রাপ্ত সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করে অভিযোগপত্র দায়েরেও পক্ষপাতিত্ব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তদন্তে প্রাপ্ত অভিযুক্ত যদি প্রভাবশালী হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগপত্রে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগকে হালকা করে দেয়া হয় বা ছাড় দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের সাথে তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ উঠে। ফলে পুলিশের কাছে সাধারণ নাগরিকগণ তাদের প্রাপ্য নাগরিক সেবা গ্রহণের বিষয়ে আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

এসবের বাইরেও কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের মাদক ব্যবসায়, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়, সংগঠিত যৌন ব্যবসায়, চাঁদাবাজি, তেলবাজি, হপ্তাবাজী, নিরাপরাধ ব্যক্তিদের জিম্মি করে মুক্তিপন আদায়, মামলা জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, গ্রেফতার বাণিজ্য, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে যুক্ত হওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কাজ ও অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। পুলিশী হেফাজতে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন, নারী নির্যাতন, ধর্ষনের ঘটনা সমাজ্র পুলিশ বিভাগের মুখে কালিমা লিপ্ত করছে। কিছু ক্ষেত্রে অপরাধের সাথে যুক্ত কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও তা দৃষ্টান্তমূলক না হওয়ায় জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছে না।

বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতা এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাবানদের তল্পীবাহক হওয়া, অপরাধীদের সাথে যোগসাজশ, কোথাও কোথাও অতি উৎসাহী হয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মত আচরণ-কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং পুলিশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করতে জাসদের দাবি :

(০১) বাংলাদেশ পুলিশকে জনগণের আস্থাশীল, সুশাসন ও আইনের শাসনের সহায়ক বাহিনী হিসেবে ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

(০২) পুলিশের কাছে যাওয়া প্রতিকার প্রার্থীদের অবহেলা, অসম্মান না করে দ্রæত প্রতিকার দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(০৩) পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবসহ সকল অশুভ প্রভাবের উর্ধে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

(০৪) পুলিশের যে সকল কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

(০৫) পুলিশী হেফাজতে আটক বন্দির শারীরিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষনের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করতে হবে।

(০৬) সকল অভিযোগ নিরপেক্ষ তদন্ত করে, তদন্তে প্রাপ্ত অভিযুক্তকে দল না দেখে-মুখ না দেখে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন মহানগর জাসদের সহ-সভাপতি হাজী মোফাজ্জল হোসেন পাটোয়ারি, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক এনামুল হক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মামুন দাস, আজহার মৃধা, আব্দুস সালাম, মো: আলাল হোসেন প্রমুখ।

add-content

আরও খবর

পঠিত