নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন দোকান প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ঈদ বোনাস না দিয়ে উল্টো ছাটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা থাকলেও এ থেকে বঞ্চিত হয়ে অনেকই পায়নি পুরো মাসের বেতন। এ বিষয়ে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও মালিক সমিতির সাথে কথা বলেও কর্মচারীরা পায়নি সমাধান।করোনাকালে এমন পরিস্থিতিতে সহগযোগীতা চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান সহ কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়ন।
সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের অভিজাত মার্কেট হক প্লাজা, সমবায়, এফ রহমান সুপার সহ অনেক মার্কেট এর বিভিন্ন দোকান প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা ইতমধ্যে ছাটাই হয়ে গেছে।যাদের কেউ কেউ দীর্ঘ ১০ বছর, ৫বছর, ২বছর ধরে বিভন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। আর যারা ছাটাই হয়নি তাদের অনেককে দেয়া হচ্ছে ঠুনকো অভিযোগ কিংবা মানসিক চাপ। যাতে করে তারা স্বইচ্ছায় কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
এর কারণ জানতে চাইলে একাধিক কর্মচারী নাম জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশে ক্ষোভ নিয়েই বলেন, মালিকদের সারা বছর লাভ করাতে দিন রাত পরিশ্রম করেছি। ঈদের সিজেনে এবারের করোনায় না হলেও দোকানেই রাত জেগে মাল গুছিয়েছি। তবে এই করোনার কারণে বেচাঁকেনা কম থাকায় মালিকরা লোকসান দিতে পারবেনা। তাই কর্মচারীদের চাকরি থেকে না করে দিচ্ছে।
শহরের টপ মার্ট এর একজন কর্মচারী জানান, শুরু থেকেই এখানে কাজ করছি। প্রায় ২৫ জনের মত কর্মচারী এখানে কাজ করতো। এখন দিন দিন কমছে। কারণ মালিক এখন আমাদের বলে দিচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ পার্সেন্ট বেতনে কাজ করতে। তা না হলে চলে যেতে।
হক প্লাজা প্রিয়তা শাড়ি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী জানায়, ১০ বছর ধরে কর্মরত ছিলাম। হঠাৎ করেই না করে দিয়েছে। মালিক বলছে, বাসায় থাকেন করোনা পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে ডাকবেন। একই অবস্থা এফ রহমান সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলা মা বস্ত্র বিতানে এক বছর চাকুরী করা আরেক কর্মচারীর। পাওয়া যায় সমবায় মাকের্টের শুভেচ্ছা শাড়ি বিতানের কর্মরত ভুক্তভোগী সহ আরো কয়েকজনকে।
জানা গেছে, প্রাণঘাতী কেরানা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমন রোধে লকডাউন ছিল সকল জেলা। বন্ধ ছিল সরকারী-বেসরকারী সহ বিভিন্ন দোকান প্রতিষ্ঠান। এতে করে কর্মহীণ হয়ে পড়ায় অনেকটাই মানবেতর জীবন কাটিয়েছে এসব খেটে খাওয়া বেতনভুক্ত কর্মচারীরা। তবে এ দু:সময় মালিকদের পক্ষে কোন সহযোগীতা না পেয়েও পরবর্তিতে লকডাউন শিথিল অবস্থায় কর্মস্থানে যোগ দিয়ে মাস শেষে পায়নি পুরো মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস।
এ বিষয়ে জেলার দোকান ও প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মোজাম্মেল হক জানান, মালিকরা কর্চারীদের শতভাগ বেতন-বোনাস দিচ্ছে না। করোনাকালে মালিকরা কোন খোঁজখবর কিংবা সহযোগীতার হাত বাড়ায়নি। বরং লকডাউন শিথিল অবস্থায় দোকান খুলে দেয়া হলে কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থলে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষেও মালিক পক্ষ তাদের কোন বোনাস দেয়নি। পাশাপাশি ৪০-৫০ পার্সেন্ট বেতন দিয়ে অনেককে ছাটাই করা হচ্ছে। এতে করে পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন কাটছে কর্মচারীদের। মালিকদের কাছে একাধিকবার গিয়ে কোন সমাধান পায়নি। আমরা উপদেষ্টা আজমেরী ওসমানের নির্দেশে এখনো কোন অশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় তেমন কিছু করছি না। তবে মালিকরা এর সমাধানে এগিয়ে না আসলে আমরা আর বসে থাকতে পারবোনা। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করবো। ইতমধ্যে এর সমাধানে শ্রম অধিদপ্তর থেকে শুরু করে চেম্বার অব কর্মাস ও আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের সন্তান আজমেরী ওসমানের শরনাপন্ন হয়েছি। লিখিতভাবে আমরা একটি স্মারক জমা দিয়েছি।
এ বিষয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতিকে তার ব্যবহৃত ০১৭১১ . . . . ৯৫ একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেন নি। তবে সাধারণ সম্পাদক আরিফ দিপু বলেন, কর্মচারীরা দোকান প্রতিষ্ঠান খোলার পর ১৫দিনের মত কাজ করেছে। আমরা তাদের ত্রিশদিনের টাকা দিয়েছি। বোনাস টা আমরা সেখানেই যুক্ত করেছি। আলাদাভাবে ১৫দিনের বোনাসটা আমরা আর উল্লেখ করেনি। আর যারা এসব অভিযোগ করছে তা সত্যি নয়। কারণ ওনাদের অনেকেই প্রকৃত কর্মচারী নয়। কোথায় আমার মার্কেটের কোন কর্মচারীদের তো এমন কোন অভিযোগ শুনিনি। এছাড়াও তিনি কোন অনুলিপি পাননি বলে দাবী করেন। তবে সভাপতি ঢাকায় থাকেন তিনি পেয়েছেন কিনা এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি।
দোকান প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের শতভাগ বেতন ও ঈদ বোনাস পেতে আবেদনে উল্লখ করা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ দোকান কর্মচারীরা বর্তমানে করোনা মহামারী থাকার দরুন খুবই অসহায় এবং কষ্টে দিন যাপন করছে। ঘর ভাড়া এবং তিনবেলা খাওয়া কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে। এর মধ্যে মার্কেটের দোকানের মালিকগণ তাদের কোন ভালমন্দ খোঁজ খবর নিচ্ছে না। এমনকি তাদের প্রাপ্য বেতন বোনাস ঠিকভাবে দিতে চাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ১৬মে নারায়ণগঞ্জ দোকান মালিক সমিতি বরাবর আবেদন করেও কোন সাড়া পায় নি।
তাই সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে কর্মচারীদের ১০০% বেতন বোনাস দেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ , সদর থানা ও শ্রম অধিদপ্তর সহ সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান তনয় আজমেরী ওসমানের কাছে স্মরাকলিপি আবেদনের মাধ্যমে সহযোগীতা চেয়ে শরনাপন্ন হয়েছিল।