নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বিশেষ প্রতিনিধি) : নারায়ণগঞ্জের ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বেড়েই চলছে প্রতিবাদের ঝঁড়। চায়ের কাপ থেকে শুরু করে ভার্চুয়্যাল জগতেও থেমে নেই প্রতিবাদ। বিশেষ করে জনপ্রিয় সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিনিয়তই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রকাশ করছে নিন্দা ও ক্ষোভ। ইতমধ্যে বন্ধ হওয়া অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবিতে নারায়ণগঞ্জের ৫১টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন যৌথ বিবৃতিও দিয়েছে।
এছাড়াও প্রচারের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলো। এ ইস্যু নিয়ে চলছে ফেসবুকে লাইভ টক শো। নানা মন্তব্য, আলোচনা-সমালোচনায়ও দেখা যায়, পোর্টালগুলি খুলে দেয়ার দাবীতে সকলেই যেন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। এমতাবস্থায় জেলার সকল সংবাদকর্মীদের ঐক্য মতের ফলে খুব শিঘ্রই খুলতে পারে সমাধানের পথ। তা না হলে ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধারটা ভবিষ্যতে অভ্যাসজনিত কারণে আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীন সাংবাদিকগণ।
জানা গেছে, গত ১৪ মে সন্ধ্যা থেকে নারায়ণগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঠকেরা যুগের চিন্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজ নারায়ণগঞ্জ টোয়েন্টিফোর ডটনেট, প্রেস নারায়ণগঞ্জ ডটকম, নারায়ণগঞ্জ টুডে ডটকম ও সময় নারায়ণগঞ্জ ডটকম এই পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ঢুকতে পারছেন না। প্রথম কয়েকদিন কদাচিৎ পাঠকরা ঢুকতে পারলেও ২২ মে থেকে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। শুরুতে বিষয়টি কারিগরি ত্রুটি মনে করা হলেও নিউজ পোর্টালগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের দ্বারা ওয়েবসাইটগুলো ব্লক হওয়ার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে দু:খজনক হলেও সত্য! বন্ধ হওয়ার আগে বা পরে এখনো অবধি সম্পাদকগণ জানেনা, কেন ব্লক হলো তাদের নিউজ পোর্টাল। পায়নি এ বিষয়ে কোন নোটিশ।
এ বিষয়ে নিউজ নারায়ণগঞ্জ টোয়েন্টিফোর ডটনেটের এডিটর ইন চিফ শাহজাহান শামীম ধারণা করে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা নিয়ে একটি খবর প্রকাশের কারণে তাদের ওয়েবসাইট ব্লক হয়ে থাকতে পারে। তবে তিনি দাবি করে বলেন, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ( নারায়ণগঞ্জে নামেই করোনা হাসপাতাল ) শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বক্তব্যও সংযুক্ত ছিল ওই প্রতিবেদনে। মূলত সংবাদটি আপলোড হওয়ার পর জেলা প্রশাসনের সভাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। ওই সময়ে সভায় উপস্থিত কয়েকজন নিউজ নারায়ণগঞ্জ টোয়েন্টিফোর ডটনেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেন। তখন নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী এমপিও এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং নিউজ নারায়ণগঞ্জসহ সময়ের নারায়ণগঞ্জ, অনলাইন পোর্টাল নারায়ণগঞ্জ টুডে ও প্রেস নারায়ণগঞ্জের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। আরেকজন এমপি তখন যুগের চিন্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। মূলত সেদিন সন্ধ্যার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি অনলাইন পোর্টালে ঢোকা যাচ্ছে না।
তার দাবি, জনপ্রতিনিধি, এমপি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা কাউকে কোন ধরনের আঘাত দেওয়ার জন্য তারা ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি। বরং হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতিই ছিল তাদের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু।
যুগের চিন্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের এডিটর ইন চিফ মোরছালিন বাবলা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের একটি মহল যারা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যান তারাই অনলাইনগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে করে তাদের অপকর্ম, দুর্নীতি প্রকাশ না পায়। এ মহলটি চায় না নারায়ণগঞ্জে ভালো গণমাধ্যমের অস্তিত্ব থাকুক, বাক স্বাধীনতা থাকুক, মানুষ কথা বলুক, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে লিখুক। এ মহলটি কে বা কারা? জবাবে তিনি বলেন, যার ক্ষমতা আছে তিনিই এ কাজ করেছে। নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাবান করা, কারা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ঘটায় এটা নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে। এ মহলটি চিহ্নিত।
তিনি বলেন, সাধারণ ছুটির মধ্যে অনলাইনগুলো বন্ধ করা হয়েছে। তাই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। তাছাড়া আমরা প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী হয়েছে। আমরা মনে করেছি কারিগরি ত্রুটি। পরে জানতে পারি বিটিআরসি বন্ধ করে দিয়েছে। অনলাইনগুলো চালু করার দাবিতে ১ জুন থেকে বিটিআরসির ও ডিসিকে স্মারকলিপি দেওয়া, মানববন্ধন, অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। অন্য অনলাইনগুলোর সম্পাদকেরাও বন্ধের কারণ জানেন না বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, অনলাইনগুলো আমার কাছ থেকে অনুমোদন নেয় না। তাই এ বিষয়ে আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসনের সভায় নিউজ পোর্টালগুলোর বিরুদ্ধে এমপিদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষে তারা এ বিষয়ে কথা বলেন। অনেকেই বলেছেন, অনলাইনগুলো হুটহাট যেসব নিউজ করে এগুলো নারায়ণগঞ্জবাসী ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। এমন আলোচনা হয়। সবাই আলোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কিন্তু অনলাইনগুলোর অনুমোদন আমার কাছ থেকে নেয় না সেজন্য আমি কিছু করতে পারি না।তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কেউ আমাকে জানায়নি। যেসব গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে তারা আমার কাছে আবেদন করলে আমি ঊর্ধ্বতনদের জানাব। সেইভাবে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বহুল প্রচারিত একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, চাইলেই বিটিআরসি কিছু বন্ধ করে না। এ বিষয়ে সরকারের কিছু নিয়ম কানুন আছে। সরকারের অনেকগুলো সংস্থাও এ বিষয়ে জড়িত এবং কোন ওয়েবসাইট বন্ধ হবে সেই সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই হয়। আমরা কেবল বাস্তবায়ন করি।