নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডে পানি সংকট বর্তমান সময়ের জন্য একটি আলোচিত বিষয়। সম্প্রতি এ ঘটনায় এলাকার অসংখ্য নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে মানববন্ধন হওয়ায় সকলের মাঝে এটি বিস্ফোরন্মুখ হয়ে ওঠে। এ কারণে গত সপ্তাহে বিষয়টি ছিল টক অব দ্য বন্দর। কিন্তু এ নিয়ে বিজ্ঞ মহল ও সাধারণ মানুষের জানার আগ্রহই কাটছেনা তাই এর মূল তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরতে গণমাধ্যমকর্মীরা ছুটে বেড়ায় খবরের পেছনের খবর অর্থাৎ আড়াল হয়ে থাকা তথ্যসমূহ বের করতে। আর তাইতো সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পানি সংকট এবং মানববন্ধনসহ নানা বিষয়াদি। প্রসঙ্গতঃ ২৪নং ওয়ার্ডের কদম শরীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শুরু করে ইসলামবাগ,নবীগঞ্জ বাজার,টি হোসেন
রোড,নোয়াদ্দা,কাইতাখালি,বক্তারকান্দি আমিরাবাদ,চৌরাপাড়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার একমাত্র পানির পাম্পটি বিকল হয়ে যায়। সেই থেকে এলাকাবাসী প্রকট পানির সমস্যায় ভুগতে থাকেন। পানির প্রকট সমস্যা জানার জন্য প্রতিবেদক ছুটে যান স্থানীয় ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেনের বাস ভবনে। সেখানে তাকে কিছুটা অসুস্থ্য দেখা গেলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কথা বলতে বিছানা থেকে উঠে আসেন তিনি। জানা যায় নানান কিছু। তার সঙ্গে শুরুতেই কথা হয় নবীগঞ্জের ডিপ টিউবওয়েল পাম্প বিকল এবং তার করণীয় বিষয়ে। জবাবে আফজাল হোসেন বলেন,ওয়াসার নবীগঞ্জের পাম্পটি বিকল হওয়ার পর এলাকাবাসীর প্রতি আমার কোন অবহেলা ছিলনা। আমি আমার ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে আনা ১ হাজার লিটারের ৩টি গাজী ট্যাংক এলাকাবাসীর সুবিধার্থে ইসলামবাগ, টি হোসেন রোডসহ ৩টি স্থানে নিজের অর্থায়নে ইট-বালি দিয়ে স্থাপন করে দেই। তারপর অন্য লাইন থেকে পাইপের সাহায্যে ঘরে ঘরে পানির ব্যবস্থা করি। এই পরিস্থিতি থেকে এলাকাবাসীকে মুক্তি দিতে সাথে সাথে যোগাযোগ করি ওয়াসার খানপুরের মডস জোনের প্রকৌশলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন,এই মুহুর্তে পাম্প স্থাপনের কোন সম্ভাবনা নেই। সেটা অনেক সময়ের ব্যাপার। একথা শোনার পর তাকে বলা হয় আপাতত কি করা যায়। তার পরামর্শ অনুযায়ী নবীগঞ্জবাসীর জন্য সাময়িকভাবে পানি সরবরাহের জন্য ওসমান পরিবারের সহায়তায় ১২টি গাজী ট্যাংক নেই। এরপর যোগাযোগ করি ওয়াসার ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সৈয়দ গোলাম আহাদ সাহেবের সাথে ওসমান পরিবারের বদৌলতেই তার সঙ্গে আগে থেকেই একটা গভীর সম্পর্ক ছিল বিধায় তার সহযোগিতায় ডিওলেটারের মাধ্যমে নবীগঞ্জে আরো একটি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্ধ করানো হয়। কিন্তু ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনে ৩/৪ মাস সময় লাগতে পারে সেই জন্য ২০টি পানির ট্যাংকি চাওয়া হলে তারা জানান তল্লা এলাকার জন্য ইতোমধ্যে ২০টি ট্যাংকি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এরপর ওসমান পরিবারের সহায়তায় অনেক অনুরোধের পর তল্লার ২০টি ট্যাংকি বাতিল করে নবীগঞ্জে ১২টি ট্যাংকি বরাদ্ধ করাই। তাছাড়া ডিপ টিউবওয়েলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পোঁছেছে। এখন কেবল পানি সাপ্লাই দেয়ার অপেক্ষায়। অথচ এরই মধ্যে মানববন্ধন করায় কর্তৃপক্ষ এক প্রকার বাধ্য হয়েই অপ্রস্তুত লাইন চালু করে দেন। অপ্রস্তুত সংযোগ চালু করায় ওয়ার্ডের সংযোগগুলোতে বালিযুক্ত পানি সরবরাহ হচ্ছে।
এতে করে এসব পানি ব্যবহার ওয়ার্ডবাসীর জন্য হুমকির কারণও হতে পারে। মানববন্ধন কর্মসূচী একটি ভাল উদ্যোগ জনগণের কল্যাণের জন্য এ ধরণের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তবে এই মুহুর্তে জন সাধারণের জন্য এটি ক্ষতিকারক হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা ডিপ টিউবওয়েলটির মাত্র বোরিং কাজ শেষ হওয়ার পথে এখন পর্যন্ত ওয়াসা কর্তৃপক্ষের গ্রীণ সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক অবস্থায় এটি পরীক্ষামুলকভাবে পানি সাপ্লাই করা হয়। পরে কোন প্রকার বালি বা ত্রুটি দেখা দিলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পানি সাপ্লøাই দেয়ার কথা কিন্তু পরীক্ষা না করেই পানি সাপ্লাই দেয়ায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ পানি সরকরাহের আশংকা করা হচ্ছে। আর কয়েকটা দিন পরে চালু করলে ওয়ার্ডবাসী একেবারে শতভাগ পিওর পানি ব্যবহারের সুযোগ পেত। আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বরং নিয়ম মাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চালু করা হলে এই অঞ্চলের মানুষকে ৫০ বছরেও পানির জন্য কোন কষ্ট করতে হবেনা।
এ ব্যাপারে বোরিং কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ধানমন্ডি ফলগু সন্ধানী লিমিটেডের সাইট সুপারভাইজার মোঃ জুয়েল রানার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, নতুন ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের সুবিধার্থে আমরা বোরিং এর কাজ করে থাকি। এসব কাজ সাধারণতঃ ২/৩ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যায় কিন্তু নবীগঞ্জের এই প্রজেক্টটিতে অতি মাত্রায় বালু থাকায় বোরিং কাজ দু’দফা করতে হয়েছে। আমরাও এসব কাজে কখনো দেরী করিনা। কিন্তু বালুর কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবেই দেরি হয়ে গেছে এটা ¯্রফে প্রাকৃতিক সমস্যা। এদিকে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে তাদের নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই ডেকে এনেছেন। যেহেতু বোরিং কাজ এখনো শেষ হয়নি সেহেতু এই মুহুর্তে পানির লাইন চালু করে দেয়া ঠিক হয়নি। এখন পর্যন্ত ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সিগন্যালই দেননি এরই মধ্যে এলাকাবাসী মানববন্ধন করায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ডিপ টিউবওয়েলের বোরিং কাজ বাকী থাকতেই পানির লাইন চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। এলাকাবাসীর চাপে পড়ে পানির লাইন চালু করলেও ওই লাইন এখনো শতভাগ সম্পন্ন হয়নি।
এতে এলাকাবাসীর উপকারের চাইতে ক্ষতির আশংকাই বেশি। এদিকে ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মডস জোনের প্রধাণ নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,নবীগঞ্জের পাম্পটি চালু করে দেয়া হয়েছে। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য আরো একটি পাম্প স্থাপন কাজ অনেকটা প্রক্রিয়াধীন। নদীর এপাড়-ওপাড় আরো দু’টি পাম্প স্থাপন করা হবে। মাহমুদনগরের পাম্পটিও বিকল হয়ে আছে সেখানে নতুন করে নতুন পাম্প বসানোর ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন। নবীগঞ্জ পাম্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান,এটা একান্তই ফলগু সন্ধানী লিমিটেডের ব্যাপার আমরা কেবল উপরের নির্দেশে লাইন চালু করে দিয়েছি। এই মুহুর্তে ওই ওয়ার্ডে পানির সমস্যা নেই বললেই চলে।