নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : এখনো হাতে মেহেদীর রং। গত ২২ ফেব্রুয়ারি রঙ্গিন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে স্বামীর সংসারে গিয়েছিলেন সুমাইয়া আক্তার ঝড়া (২০)। এর এক মাস যেতে না যেতেই মঙ্গলবার রাতে লাশ হয়ে স্বামীর ঘর থেকে বের হলেন এ নববধূ। নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকার ছোট ভগবানগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সুমাইয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো মেয়ে সুমাইয়াকে। কিন্তু জীবিতাবস্থায় শেষ আর যাওয়া হলো না। শ্বশুরবাড়ি থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে। অকালেই ঝড়ে গেলো ঝড়া।
বিয়ের এক মাস মাস যেতে না যেতেই শ্বশুর বাড়িতে এক রহস্যঘেরা মৃত্যু হয়েছে নববধূর । শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি পুত্রবধূ ঝড়া আত্মহত্যা করেছেন। অপর দিকে বাবা-মা ও ভাইয়ের দাবি ঝড়াকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার কথা বলা হচ্ছে। ঘটনাটি ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ঘটলেও রহস্যজনক কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঝড়ার মৃত্যুর খবর জানায় রাত বারোটায়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ছোট ভগবানগঞ্জের (খোয়ারপট্টি) জামান ডাক্তারের বাড়ির তৃতীয় তলার চিলেকোঠা থেকে রাত ১টায় নববধূর লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দারোগা আমিনুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
এমন ঘটনার খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার রামপাল থেকে বাবা আবদুর রহিম রাঢ়ী, মা নাজমা বেগম, একমাত্র ভাই রিংকু ছুটে আসেন। পরিবারের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় লাশ হতে হওয়ার ঘটনায় নিহতের বাবা-মা, ভাইয়ের কান্নায় ছোট ভগবানগঞ্জের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
নিহতের বাবা আবদুর রহিম রাঢ়ী ওরফে সেন্টু জানান, গত কয়েক বছর যাবৎ আমার মেয়ের সাথে ডাক্তার বাড়ির ছেলে ফায়াদ আহমেদ বাবুর বিয়ে দিতে নানা ভাবে চেষ্টা চালায় তার পরিবার। অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। আমেরিকা প্রবাসী বাবু বিয়ের এক মাসের মধ্যেই বিদেশ চলে যান। এরপর থেকেই বাবুর বাবা ফারুক হোসেন, মা আজমিরী বেগম, বোন ও বোন জামাই মোলক আহমেদ নানা ভাবে ঝড়াকে নির্যাতন শুরু করে। ঝড়ার ননদের স্বামী মোলক আহমেদ নানা ভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছিলো বলেও মায়ের কাছে অভিযোগ করেছিলো ঝড়া।
গত চার দিন তাকে নিয়ে যেতে মুন্সীগঞ্জে থাকা বাবা-মাকে বারবার অনুরোধও করেছিলো ঝড়া। বুধবার সকালে মা ও ভাই এসে ঝড়াকে তার বাবার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ নিয়ে যাবার কথা ছিল। ঝড়া যাচ্ছে, তবে লাশ হয়ে। কথাগুলো জানিয়ে অবুঝ শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেন নিহতের বাবা।
নারায়ণগঞ্জ থানার শীতলক্ষা ফাঁড়ির দারোগা আমিনুল জানান, মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের আগে বলা সম্ভব না।