নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে স্বশরীরে পাঠদান কর্মসূচী। প্রতিটি স্কুলে পাঠদানে অংশ নিতে পেরে উচ্ছাসিত শিক্ষার্থিরাও। তবে নগরীর হাজিগঞ্জ ড্রেজার জুনিয়ার হাইস্কুলের শ্রেণিকক্ষে এখন শিক্ষানবিস আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হওয়ায় ক্ষুব্দ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু প্রশিক্ষনার্থীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার কমান্ড্যান্ট সোনারগাঁ উপজেলার টিআই উত্তম কুমার দেবনাথ শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কোনরকম ক্ষতি চান না এমনটা দাবী করে তিনি বলেন, ড্রেজার পরিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুল হকের অনুমতি নিয়েই শ্রেণিকক্ষগুলো তারা প্রশিক্ষনার্থীদের থাকার জন্য ব্যবহার করছেন। এ প্রশিক্ষণ ২১ দিন ব্যপী চলবে। অনুমতি নেয়ার আগে তিনি জানতেন এই স্কুলটিতে তেমন একটা শিক্ষার্থী নেই।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা পারভিন আক্তার মালা জানান, কোনরকম অনুমতি কিংবা অবগত ছাড়াই ড্রেজার জুনিয়ার হাইস্কুলে আনসার সদস্যরা শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় ব্যঘাত ঘটছে। একজন প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি জানিনা। এ বিষয়টি নিয়ে ড্রেজার পরিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুল হক সাহেবকে আমি জানালে তিনি কোন সদোত্তর দেন নি। বরং এরপর থেকে তিনি আমার কোন কলও রিসিভ করেন না। তাছাড়া ড্রেজারের অতিরিক্ত পরিচালক (এডি ) রবিউল ইসলামকে জানালে উল্টো তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে স্কুল নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করতে না বলে, হুমকী দেন। অথচ আমি স্কুলের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার স্বার্থে কথা বলেছি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ড্রেজার পরিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুল হকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে, তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবেনা বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কলটি কেটে দেন। পরে অতিরিক্ত পরিচালক রবিউল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভাই ফোনে এখন কিছু বলতে পারবোনা। আপনি অফিসে আইসেন কথা বলবো।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলটির দ্বিতীয় তলায় বর্তমানে প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে প্রশিক্ষণের জন্য নতুন আনসার সদস্যরা তাদের থাকার জন্য বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। শ্রেণিকক্ষের ব্লাকবোর্ডের সামনে গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি বস্ত্রগুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের ব্যাঞ্চগুলোকে বাহিরে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্কুলটির আরো কয়েকজন শিক্ষিকা তাদের স্বাভাবিক চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান। তাছাড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্যও টয়লেট করার ক্ষেত্রে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদপ্তরের আওতাভুক্ত ড্রেজার জুনিয়ার হাইস্কুলটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র্দীঘ ৩৫ বছর হলেও এই স্কুলটি তেমন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। তাছাড়া বিগতবারও এ স্কুলটি বন্ধে একটি মহল কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরআগে, ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা হয়েছিল। এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ৩শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।
পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে স্কুলটি হঠাৎ করে বন্ধের কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
পাশাপাশি মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ রাখা হয়েছিল এছাড়াও স্কুলটি বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। তাছাড়া স্থাণীয় সাংসদ সেলিম ওসমানও স্কুলটি পরির্দশনে যান। তিনি ওইসময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবান্ধব তাই এ স্কুলটির ব্যপারে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমিও চাই যেন স্কুলটি খোলা থাকে এজন্য সার্বিক সহযোগীতায় পাশে থাকবো।