চৈতী কম্পোজিটকে বিষাক্ত বর্জ্য খালে না ফেলতে এমপি খোকার নির্দেশ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সোনারগাঁ সংবাদ দাতা ) : সোনারগাঁ পৌরসভার টিপরদী এলাকার চৈতি কম্পোজিট কোম্পানির বর্জ্য খালে না ফেলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। বৃহস্পতিবার বিকেলে চৈতী কম্পোজিটের আশপাশের খাল ও জলাশয়গুলো পরিদর্শন করতে গেলে কোম্পানির গড়ে তোলা গোপন তিনটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়ে তিনি এ নির্দেশ প্রদান করেন।

জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার টিপুরদী এলাকায় ২০০১ সালে চৈতি কম্পোজিট নামের একটি কোম্পানি গড়ে উঠে। কোম্পানি স্থাপনের পর থেকে কোম্পানির ক্যামিকেল মিশ্রিত বর্জ্য স্থানীয় খালে ফেলে পরিবেশ দূষণ করে। এ অভিযোগে কয়েক দফায় কোম্পানির গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ অর্থিক জরিমানা করা হয়। সম্প্রতি চৈতি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি কয়েকটি সুরঙ্গের মাধ্যমে খালে ফেলে ওই এলাকায় মোগরাপাড়া. পিরোজপুর, সনমান্দি ইউনিয়ন ও পৌরসভাসহ ৩০টি গ্রামের লোকজনের পানি ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলে। একারণে পুকুরের মাছও মারায় যায়। এছাড়াও এলাকার মানুষ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে লিয়াকত হোসেন খোকার কাছে এলাকাবাসী অভিযোগ নিয়ে আসলে তাৎক্ষনিক ওই এলাকা পরিদর্শ করে বর্জ্য নিস্কাশন বন্ধ করতে যান। এসময় এমপি ওই কোম্পানির বিষাক্ত বর্জ্য নিস্কাশনের প্রমাণ পান। এ সময় চৈতি কর্তৃপক্ষকে এ পানি না ফেলার নির্দেশ দেন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, চৈতি কম্পোজিট খাল দিয়ে বিষাক্ত পানি উপজেলার সনমান্দি, পৌরসভা ও মোগরাপাড়া ও পিরোজপুর ইউনিয়নের শাখা খাল থেকে শুরু করে মেনীখালি ও ব্রহ্মপুত্র নদের গিয়ে মিশে নদীর পানি কালো ও দুর্গন্ধ হয়ে পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে খালে মাছ নষ্ট হয়ে মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে খালগুলো। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলো পানির সাথে মিশে তিনটি ইউনিয়নের ফসল ও ফসলী জমি গুলো নস্ট করে ফেলেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ করেন, চৈতী কম্পোজিট কর্তৃপক্ষ এলাকার কিছু প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে রাতের আধারে গোপন সুয়ারেজের মাধ্যমে তাদের বিষাক্ত বর্জ্যযুক্ত পানি বিভিন্ন খাল ও নদীতে ফেলে। তাদের ফেলা বর্জ্যগুলো এতটাই বিষাক্ত যে এ পানি শরীরের যেখানে লাগে সেখানে চুলকানি হয়ে ঘাঁ হয়ে যায়। অনেকে আবার বর্জ্যের পানিতে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যালে শ্বাসকষ্ট ও এলার্জি সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কম্পোজিটটি পানি পরিশোধনের জন্য ইটিবি নির্মান করলেও তা ব্যবহার করছে না।

পৌরসভার মেয়র সাদেকুর রহমান জানান, আমিও এ বিষয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। পৌরবাসীর অভিযোগ সত্যতা পেয়েছি। আমার কয়েকজন কাউন্সিলর মিলে এ পানি নিষ্কাষনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে। এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চৈতী কম্পোজিটের এজিএম মিজানুর রহমান জানান, আমাদের কোম্পানীর পানি ইটিপির ব্যবহারের মাধ্যমে পরিশোধিত করে ফেলা হচ্ছে। এক ফোটা পানিও আমরা খালে ফেলি না। আমাদের নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলছি।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সতত্যা পেয়েছি। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে পানি না ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত