নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জে করতোয়া এজেন্সীর বিরুদ্ধে আবারো হজ্ব যাত্রীদের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে সৌদিতে হজ্ব যাত্রীদের অনেকেই সময়মত খাবার পাচ্ছেনা। নিজ র্অথ ব্যয় করে হলেও তারা জানেনা কিভাবে মদিনায় যাবে। কোথায় কি খাবার পাবে। কিভাবেই বা চলে আসবে। বিশেষ করে যারা নতুন গিয়েছে তারা পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, হজ্ব যাত্রীদের সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সেখান থেকে পালিয়ে গেছে করতোয়ার দায়িত্বে থাকা মোয়াল্লেম আমির হোসেন। রবিবার ( ২৫ আগস্ট ) সৌদি সময় বিকাল ৪টা থেকেই আমির হোসেন হাজ্বীদের স্থান ত্যাগ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে ফেরত আসা হাজ্ব যাত্রী ।
শহরের নিকটবর্তী বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে গলাচিপা মোড়ে অবস্থিত জরিনা ম্যানশনে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। যেখানে একই কার্যালয়ে পরিচালিত হয় করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যশনাল ও করতোয়া হজ্ব-উমরাহ এজেন্সী, যার লাইসেন্স নং- ৮৯৩। আর এখানেই পবিত্র হজ্ব-উমরাহ, টিকিটিং, অনুবাদ, ভিসা, বৈদেশিক মুদ্রা ও পাসপোর্ট সহ বিভিন্ন সেবা প্রক্রিয়া চালিয়ে থাকেন কর্তৃপক্ষ। তবে নানা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে প্রচারণা চালালেও তাদের সেবায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিশেষ করে পবিত্র হজ্ব গমন যাত্রীরা।
অভিযোগ উঠেছে, নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলে করতোয়া ট্রাভেলস লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও যাত্রীরা পায়নি তাদের নুন্যতম সেবা। তিনবেলা খাওয়া, হারাম শরীফের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। হজ্বের স্থানে পা হেটেই নামাজ পড়তে পারবে এমন দুরুত্বে রাখার কথা। তবে এর কোন কিছুই ঠিক রাখেননি এজেন্সি কর্তৃপক্ষ। বরং বাস পরিবহন দিয়ে কাকিয়া নামক একটি এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে চলে যায় করতোয়ার কর্তৃপক্ষ। যেখান থেকে হেটে আসতে দুরত্ব র্দীঘ ১২ কিলোমিটার।
জানা গেছে, ১লা আগস্ট করতোয়া ট্রাভেলস এর মাধ্যমে বিমানযোগে সৌদিতে পবিত্র হজ্ব পালনে যান ৫১ জন যাত্রী। এরমধ্যে ৪৫ জন যাত্রীর কাছ থেকে ত্রিশ দিনের জন্য এই সৌদি গমনে নেয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আর বাকি ৬ জনের কাছে জন প্রতি নেয়া হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা। যাদের প্রত্যেকেই এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। ইতমধ্যে ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে তিন জন রির্টাণ টিকিট কেটে চলে এসেছে। তাছাড়াও হজ্ব যাত্রীদের অনেকেই না খেয়ে অসহায় সময় পার করছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে নিজ টাকায় দেশে ফেরত আসা হজ্ব যাত্রী।
হয়রানী ও প্রতারণার শিকার ফিরতি হজ্ব যাত্রীরা সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদককে জানায়, পবিত্র হজ্ব পালনে এসেও প্রতারণার শিকার হবো, এটা কখনো কল্পনায়ও ভাবিনি। করতোয়া ট্রাভেলস এর কারণে আজ হাজীরা অনেক কষ্টে সৌদিতে মানবেতর অসহায় সময় পার করছে। মিনায় যাওয়ার জন্য একটি কার্ড দেয়ার কথা সেটিও কর্তৃপক্ষ টাকা না পাঠানোর কারণে আমাদেরকে কার্ড দেয়নি। পরবর্তিতে অনেক প্রচেষ্টায় এ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হয়। এছাড়াও মিনা, আরাফাত, মোজদালিফায় অবস্থানে নি¤œমানের তাবু ও ব্যবস্থা করে দেয়। হাজীদের খাবার দেয়ার জন্য করতোয়া কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। যতটুকুই খাবার দেয়া হয়েছে, তাও সময়মত দিতনা। এর কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা শহীদ জানিয়েছে, করতোয়া ট্রাভেলস এর বাতেন সাহেব টাকা দেয়নি। তাই দেয়া হচ্ছেনা।
এ ব্যপারে নিজ টাকায় ফেরত আসা হজ্ব যাত্রী নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী আলী ইমাম সিকদার জানান, বর্তমানে ৪৮ জন হাজী মক্কায় অবস্থান করছে। করতোয়া ট্রাভেলস এর বাতেন টাকা না দেয়ায় হাজীরা এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। তারা জানেনা কিভাবে মদিনায় যাবে। কিভাবে কোথায় গিয়ে কি খাবে। কিভাবেই বা আসবে। গত শুক্রবার ( ২৩ আগস্ট ) রাতে আমি নিজে টিকিট কিনে স্ত্রী, শাশুড়িকে নিয়ে দেশে চলে আসি। সৌদিতে গমনের পর এখন পর্যন্ত করতোয়া কতৃপক্ষ যাত্রীদের খোঁজ নিতে কোন যোগাযোগ করেনি। আমার অনুরোধ থাকবে কেউ যেন বাতেনের প্রতারণায় না পড়ে।
তবে এ ব্যপারে জানতে নারায়ণগঞ্জ করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যশনাল ও করতোয়া হজ্ব-উমরাহ এজেন্সী’র পরিচালক আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান বাতেন সায়মনের ব্যবহৃত ( ০১৭২—-৮১৩২ এবং ০১৯৭—-১৩৬২ ) নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য জানা যায়নি।
এরআগে দেশে বিভিন্ন অনিয়মের পর সৌদি আরবে গিয়েও নানা রকম প্রতারণামূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে বেসরকারি হজ্ব এজেন্সিগুলো। এজন্য মক্কা হজ্ব মিশনের ভুক্তভোগী হাজীরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে। হজ্ব ব্যবস্থাপনায় ৭৯টি বেসরকারি হজ্ব এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে মক্কা হজ মিশনে মোট ১০৭টি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হাজীরা। সে অভিযুক্ত হজ্ব এজেন্সিগুলোর তালিকায়ও করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল এর নাম রয়েছে। বিগত সময় এ নিয়ে ব্যপক আলোচনা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। তারপরেও এই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, প্রতারণা ও হজ্ব যাত্রীদের হয়রানী করা থেকে বিরত হচ্ছে না করতোয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল।
সূত্র : দৈনিক যুগের চিন্তায় ২৮ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদ।