নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (ডেস্ক রিপোর্ট) : মদ্যপান ও অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবহার করার দুইটি অভিযোগে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মো. জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের দাদা বাড়িতে অভিযান শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, অভিযানে মদ্যপান ও অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবহারের দায়ে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। তিনি আরো বলেন, সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে মদ্যপানের জন্য ছয় মাস ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখা ও ব্যবহারের দায়ে ছয় মাস করে মোট এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদকেও একই সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তার বাসা থেকে অবৈধ বিদেশি অস্ত্র (পিস্তল) ও বিদেশি মাদক উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করবে।
তিনি বলেন, রোববার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়ির সঙ্গে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিমের মোটরসাইকেলের ঘষা লাগায় তাকে বেধড়ক মারধর করেছেন গাড়িতে থাকা কয়েকজন। মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিম আহত হন। এ ঘটনায় রোববার দিনগত ভোরে বাদী হয়ে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ ইরফান সেলিমসহ চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিম। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সোমবার সাড়ে ১২টার দিতে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের অবস্থান শনাক্ত করে তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করি। এখান থেকে ইরফান ও তার দেহরক্ষী মো. জাহিদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
বেশ কিছু তথ্যের ভিত্তিতে ইরফানের বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ জিনিসপত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। তার বাসায় খাটের জাজিমের নিচ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫/৬ লিটার (৭ বোতল) বিদেশি মদ, ৭/৮ বোতল বিদেশি বিয়ার, একটি লাইসেন্সবিহীন এয়ার গান, একটি হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদের কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ইরফানের বাসা থেকে অবৈধ ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন ধরণের ৩৮/৪০টি ওয়াকিটকি, একটি ওয়াকিটকি বেইজ স্টেশন, ওয়াকিটকি সেন্টার ও আধুনিক ওয়াকিটকি সেন্টার ভিএইচএফ সিন্টেম ডিভাইস ৩টি উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক জেমার পাওয়া যায়। এসব সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ইরফার তা অবৈধভাবে ও অনুমোদনহীনভাবে নিজ বাড়িতে রেখে ও ব্যবহার করে আসছিলো।
লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি পুরান ঢাকা এলাকার চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে এসব অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবহার করতেন ইরফান। এ ভবনের একটি ফ্লোরের ফ্ল্যাটে ইরফানের টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছি। সেখানে টর্চার চালানোর বিভিন্ন ধরণের সামগ্রিও আমরা পেয়েছি। এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ দেয়, তবে র্যাব তার আমলে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে সোমবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে ধানমন্ডিতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিম নিজেই বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই গাড়িচালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ইরফানের গাড়ি ওয়াসিমকে ধাক্কা মারার পর নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিম সড়কের পাশে মোটরসাইকেলটি থামান এবং গাড়ির সামনে দাঁড়ান। নিজের পরিচয় দেন। তখন গাড়ি থেকে আসামিরা একসঙ্গে বলতে থাকেন, তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বের করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বের করতেছি। তোকে এখনই মেরে ফেলবো। এরপর বের হয়ে ওয়াসিমকে কিল-ঘুষি মারেন এবং তার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা মারধর করে ওয়াসিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যান। তার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডির ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান।