আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমির আশা উজ্জ্বল করলো বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে সেমির আশা উজ্জ্বল বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের প্রথম থেকেই দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন সাকিব। দুটো সেঞ্চুরি ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন। এ দিনও দলের ২৬২ রানে তাঁর বড় অবদান রেখে গেলেন।

যদিও তার পর বাংলাদেশ ইনিংসকে টানলেন মুশফিকুর রহিম। ৫০ ওভার শেষে আফগানিস্তানের সামনে লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয় ২৬৩ রা‌নের। যাতে পৌঁছতে ব্যর্থ গুলবাদিন নাইবরা। ম্যাচের আগের দিন তিনি হুমকি দিয়েছিলেন সবাইকে নিয়েই ডুবব। কিন্তু সেটা হল না। ৪৭ ওভারে ২০০ রানে শেষ হয়ে গেল আফগানিস্তান। জিতে নক-আউটের আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ।

সেই সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট টাইগারদের। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচ লাল-সবুজদের। জিতলে হিসাব থাকবে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে পৌঁছারও ! যদিও রানরেট আর অন্য প্রতিপক্ষের জয়-পরাজয়ের দিকেও নজর রাখতে হবে সেজন্য!

ব্যাটে-বলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এক পারফরম্যান্সের দিনে সাকিব আল হাসান হয়েছেন ম্যাচ সেরাও। প্রথমে ব্যাটে এক চারে ৬৯ বলে ৫১ রানের ঝলমলে সময়োপযোগী ইনিংস। পরে বলে ১০ ওভারের কোটা পূরণ করেছেন এক মেডেনে ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। যেটা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আগের সেরাটি ছিল ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট।

ইনিংসের শুরুতে আঁটসাঁট বোলিং করে বাংলাদেশ। আফগান ব্যাটসম্যানদের খুব একটা সুযোগ দেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো স্পিনার ব্যবহার করেননি বাংলাদেশ মাশরাফি বিন মুর্তজা। অধিনায়ক নিজে করেছেন পাঁচ ওভার। মুস্তাফিজুর রহমান তিনটি, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দুটি।

একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসেই রহমত শাহকে ফিরিয়ে আফগানদের শুরুর জুটি ভেঙেছেন সাকিব আল হাসান। স্কিড করা লেংথ বল পুল করতে চেয়েছিলেন রহমত। টাইমিং করতে পারেননি, মিড অনে ধরা পড়েন তামিম ইকবালের হাতে। ভাঙে ৪৯ রানের জুটি। ৩৫ বলে তিন চারে ২৪ রান করেন রহমত।

হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন। দারুণ স্টাম্পিং করে এতে বড় অবদান আছে মুশফিকুর রহিমেরও। ঝুলিয়ে দেওয়া বল ব্যাটে খেলতে না পেরে একটু এগিয়ে গিয়েছিলেন শাহিদি। মুশফিক ফেলে দেন বেলস। ভাঙে ৩০ রানের জুটি। ৩১ বলে ১১ রান করেন শাহিদি।

গুলবাদিন নাইবকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট পান দারুণ বোলিং করে যাওয়া সাকিব আল হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাভার ড্রাইভ মাটিতে রাখতে পারেননি আফগান অধিনায়ক। এই ধরনের শটের জন্যই শর্ট কাভারে দাঁড় করানো হয়েছিল লিটন দাসকে। চমৎকার এক ক্যাচ নেন তিনি। ৭৫ বলে তিন চারে ৪৭ রান করে ফিরেন নাইব।

এরপর গুলবাদিন নাইবকে ফেরানোর পর একই ওভারে মোহাম্মদ নবিকে বোল্ড করে বিদায় করেন সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দারুণ খেলা নবি এবার রানের খাতা খুলতে পারেননি। অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পড়ে স্কিড করে ভেতরে ঢোকা বল পা বাড়িয়ে ব্যাটে খেলতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে।

আসগর আফগানকে ফিরিয়ে সাকিব আল হাসান নেন নিজের চতুর্থ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারের ফুল লেংথ বল স্লগ সুইপ করে ওড়াতে চেয়েছিলেন আসগর। টাইমিং করতে পারেননি, সীমানায় সহজ ক্যাচ মুঠোয় নেন বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমান।

বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো চার উইকেট পেলেন সাকিব। ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো বোলার পেলেন প্রথমবার। ব্যাটে-বলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এক পারফরম্যান্সের দিনে সাকিব আল হাসান হয়েছেন ম্যাচ সেরাও।

প্রথমে ব্যাটে এক চারে ৬৯ বলে ৫১ রানের ঝলমলে সময়োপযোগী ইনিংস। পরে বলে ১০ ওভারের কোটা পূরণ করেছেন এক মেডেনে ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। যেটা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আগের সেরাটি ছিল ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট।

সাকিবের কীর্তি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ এনে দিয়েছে। সঙ্গে যুবরাজ সিংয়ের পর প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে ৫ উইকেট ও ফিফটির কীর্তি গড়েছেন। আর কপিল দেবের পর একই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেটের কীর্তি ছুঁয়েছেন।

এদিন বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন সাকিব। বাঁহাতির ব্যাটসম্যান ২৭ ম্যাচ ও চার বিশ্বকাপ মিলিয়ে বিশ্বমঞ্চে হাজারির অভিজাত ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। তাতে ইংল্যান্ড আসরে আবারও উঠে এসেছেন রান সংগ্রাহকের শীর্ষে। ওয়ার্নারকে (৪৪৭) টপকে সর্বোচ্চ ৪৭৬ রান এখন সাকিবের।

সাকিবের নামের পাশে এবার আছে অনবদ্য দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি ফিফটি। সঙ্গে ছয় ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে আছেন ভালোভাবেই। এদিন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে এক হাজার রান ও ৩০-এর বেশি উইকেট পাওয়ার কীর্তিও গড়েছেন লাল-সবুজের মহাতারকা।

এর আগে, সোমবার (২৪ জুন) সাউদাম্পটনের রোজ বোলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৬২ রান করেছে বাংলাদেশ। মূলত তিনটি পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং একটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিতে স্কোরবোর্ডে এই সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে টাইগাররা। সাকিব ৬৯ বলে ৫১ ও মুশফিক ৮৭ বলে ৮৩ রান করেন। ২৪ বলে ৩৫ রানের দারুণ একটি ক্যামিও ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক।

এবার বিশ্বকাপে এই মাঠে ছিল মোট পাঁচটি ম্যাচ। এর মধ্যে একটি ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। বাকি তিন ম্যাচের কোনোটিতেই কোনো দল আড়াইশো রান করতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ২২৭ রানের জবাবে ৪৮ ওভারে গিয়ে ম্যাচ জেতে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১২ রানে আটকে সহজেই জেতে ইংল্যান্ড। আর সবশেষ ম্যাচে ভারতকে মাত্র ২২৪ রানে আটকেও ম্যাচ জিততে পারেনি আফগানিস্তান।

উইকেট মন্থর, স্পিন-বান্ধব। মাঠও বেশ বড়। প্রতিপক্ষ দলে মুজিব উর রহমান, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবির মতো স্পিনার। তাই এ ম্যাচে কৌশল পাল্টে তামিমের সঙ্গী হিসেবে ওপেনিংয়ে নামেন লিটন দাস। পছন্দের পজিশনে শুরু থেকে সাবলীল ব্যাটিংই করছিলেন তিনি। তবে দলীয় ২৩ রানে ভাগ্যের ফেরে মাঠ ছাড়তে হয় লিটনকে।

মুজিবের বলে হাশমতউল্লাহ শহিদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। যদিও ক্যাচটা ঠিকমতো লুফে নেওয়া হয়েছে কী-না বা বলটা মাটিতে লেগেছিল কী-না তা নিশ্চিত হতে পারেননি থার্ড আম্পায়ার। তবে সফট সিগন্যাল (মাঠের সিদ্ধান্ত) আউট হওয়ায় সিদ্ধান্ত পাল্টাননি তিনি। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ১৬ রান।

এরপর তামিমের সঙ্গী হন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান। এই জুটিতে আসে ৫৯ রান। জুটি ভাঙে ৫৩ বলে ৩৬ রান করা তামিমের বিদায়ে। নবির কিছুটা দ্রুতবেগে করা ডেলিভারিটি ঠিকমতো পড়তে না পেরে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

পরের বলেই সাকিবের বিপক্ষে এলবিডাব্লিউয়ের আবেদন করেন রশিদ। আম্পায়ারও আঙুল উঁচিয়ে আউটও দিয়ে দেন। তবে রিভিউ নিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

এরপর চলমান আসরে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে বাংলাদেশের হয়ে আরেকটি অনন্য রেকর্ডের মালিক হন তিনি। পূরণ করেন বিশ্বকাপে এক হাজার রান। যার জন্য তাকে খেলতে হয়েছে মাত্র ২৭ ম্যাচ। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে টপকে ফের আসরের এক নম্বর রান সংগ্রাহক হয়ে যান এই বাঁহাতি।

সাকিবকে আউট করে বাংলাদেশের ৬১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙার পর পাঁচে ব্যাটিং করতে নামা সৌম্য সরকারকেও ফেরান মুজিব। নতুন পজিশনে সুবিধা করতে পারেননি সৌম্য। ১০ বলে করেন ৩ রান।

৮ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় বাংলাদেশকে। সে সুযোগে আফগানরা জেঁকে বসার চেষ্টা করে। ৩৭তম ওভারে দৌলত জাদরানকে ছক্কা হাঁকিয়ে এই চাপ ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরিও।

ততক্ষণে থিতু হয়ে মাহমুদউল্লাহও হাত খোলার চেষ্টা চালান। তবে আফগান দলনেতা গুলবাদিন নাইবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নবির হাতে ধরা পড়েন তিনি। ভাঙে আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি। সেখানে মাহমুদউল্লাহর অবদান ৩৮ বলে ২৭ রান।

এরপর বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশো পার হয় মুশফিক ও মোসাদ্দেকের কল্যাণে। ষষ্ঠ উইকেটে তারা যোগ করেন ৩৩ বলে ৪৪ রান। সেঞ্চুরির আশা জাগানো মুশফিককে ফেরান দৌলত জাদরান। আর ইনিংসের একদম শেষ বলে মোসাদ্দেক শিকার হন নাইবের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬২/৭ (লিটন ১৬, তামিম ৩৬, সাকিব ৫১, মুশফিক ৮৩, সৌম্য ৩, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ৩৫, সাইফ ২*; মুজিব ১০-০-৩৯-৩, দৌলত ৯-০-৬৪-১, নবি ১০-০-৪৪-১, গুলবাদিন ১০-১-৫৬-২, রশিদ ১০-০-৫২-০, রহমত ১-০-৭-০)

আফগানিস্তান: ৪৭ ওভারে ২০০ (গুলবাদিন ৪৭, রহমত ২৪, শাহিদি ১১, আসগর ২০, নবি ০, শিনওয়ারি ৪৯*, ইকরাম ১১, নাজিবউল্লাহ ২৩, রশিদ ২, দৌলত ০, মুজিব ০*; মাশরাফি ৭-০-৩৭-০, মুস্তাফিজ ৮-১-৩২-২, সাইফ ৮-০-৩৩-১, সাকিব ১০-১-২৯-৫, মিরাজ ৮-০-৩৭-০, মোসাদ্দেক ৬-০-২৫-১)

ফল : বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ : সাকিব আল হাসান

add-content

আরও খবর

পঠিত