নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রির্পোটার ) : নারায়ণগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জে শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘাতক দুলাভাই আব্বাস মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। ২০ সেপ্টেম্বরশুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেনের আদালতে তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। এসময় তিনি কেন এবং কি কারণে কি দিয়ে কিভাবে একে একে তিনটি হত্যার পর নিজের মেয়েকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন আদালতে।
এর আগের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকান্ডের পর বিকালেই সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজের ভেতর কমিউনিটি সেন্টারের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে খানসামার (ওয়েটার) কাজ করার সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এবং রাতেই তিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত গৃহবধূ নাজনিন আক্তারের স্বামী আব্দুস সোবহান সুমন মিয়া বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আব্বাস মিয়াকে একমাত্র আসামী করা হয়।
মামলায় বাদী সুমন উল্লেখ করেন, তার স্ত্রীর বড় বোন ইয়াসমিনের সাথে স্বামী আব্বাসের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। বিভিন্ন সময় এই কলহের কারণে তার স্ত্রী নাসরিন বড় বোন ইয়াসমিনের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় আব্বাসের সাথে মনোমালিন্য হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আব্বাস ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনের ঝগড়া হয়ে। পরে সুমনের শ্যালক তথা নাসরিনের ভাই হাসান বড় বোনের স্বামী আব্বাসকে মারধর করে। পরদিন সকালে হাসান তার বড় বোন ইয়াসমিন ও তার মেয়ে সুমাইয়া সহ সুমনের বাসায় বোন নাসরিনের কাছে চলে আসে। ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় সুমন কর্মস্থল সিদ্ধিরগঞ্জস্থ জোনাকী পেট্রোল পাম্প থেকে মিজমিজি সিআইখোলাস্থ আনোয়ার মালিকানাধীন ৬তলা ভবনের ভাড়া বাসায় এসে স্ত্রী ও সন্তানদের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ এবং তার স্ত্রীর বড় বোনের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় খাটের উপর জীবিত দেখতে পায়। পরে ঘটনাটি তার শ্যালক হাসানকে ফোন করে জানালে কর্মস্থল থেকে তার শ্যালক হাসান ও স্ত্রীর বড় বোন বাসায় আসে এবং হাসান জরুরী ভিত্তিতে সুমাইয়াকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল হক জানান, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আব্বাস ক্ষোভের পূঞ্জীভূত থেকেই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে জানান। বৃহস্পতিবার সকালে একটি ধারালো ছোড়া নিয়ে ফ্ল্যাটে যায়। প্রথমে সুমনের স্ত্রী নাজনিন (২৮) ও তার দুই কন্যা সন্তান নুসরাত (৮) ও সায়মার (২) গলা কেটে হত্যা করে। এসময় চিৎকার চেচামেচি করলে তার নিজের মেয়ে প্রতিবন্ধি সুমাইয়াকেও (১৫) ছোড়া দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এসআই মো. কামাল হোসেন জানান, ট্রিপল হত্যা মামলার আসামী আব্বাস দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে জেল হাজতে প্রেরন করার নির্দেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন ছয় তলার ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।