সরকারী হাসপাতালগুলোতে বিড়ম্বনায় রোগীরা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের।  একদিকে দালালদের উৎপাত, অন্যদিকে ঔষধ কোম্পানির রি-প্রেজেন্টটেটিভদের টানা হেচড়া। জরুরী বিভাগ থেকে বর্হিবিভাগ সব জায়গায় একই অবস্থা। চিকিৎসা নিয়ে বের হলেই রোগীদের ঘিরে ধরেন দালাল চক্রের সদস্য অথবা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রি-প্রেজেন্টটেটিভরা ।

রিতিমতো রোগীর হাত থেকে টিকেট কেড়ে নিয়ে মোবাইলে ছবি তোলার জন্য প্রতিযোগিতা চলে রি-প্রেজেন্টটেটিভদের মধ্যে। এমন চিত্রই চোখে পড়ে খানপুর ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ ১’শ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে। পদে পদে রোগীরা বিড়ম্বনার শিকার হলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে দিনদিন রি-প্রেজেন্টটেটিভ ও দালালদের দৌড়াত্ব সিমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির সাথে সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের যোগসাজোশ রয়েছে। নিজেদের কোম্পানির ঔষধ যাতে লিখে দেন এজন্য মোটা অংকের কমিশন দেওয়া হয় চিকিৎসকদের। ঔষধ কোম্পানিগুলো থেকে চিকিৎসকরা সাপ্তাহিক, পাক্ষিক আবার কেউবা মাসিক হারেও এই কমিশনের টাকা নিয়ে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশীর ভাগ নিন্মমানের ঔষধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের সঙ্গে চুক্তি করে থাকেন। আর এসব ঔষধ কোম্পানিগুলি সরকারী হাসপালের চিকিৎসকদের টার্গেট করে থাকেন। আর চিকিৎসকরাও বুঝেন সরকারী হাসপাতালে বসে এসব নিন্মমানের কোম্পানির ঔষধ লিখলে এর দায় বর্তাবে না তাদের উপর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, কোন চিকিৎসক তার নিজ চেম্বারে রোগীর ব্যবস্থা পত্রে নিন্মমানের কোম্পানির ঔষধ লিখেন না। কারন ওই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলে তার রোগী বাড়বে। তাই নিন্মমানের ঔষধ সরকারী হাসপাতালে বসে লিখলে কমিশনও পাওয়া যায় আবার এর দায়ও নিতে হয় না। তাই কিছু অর্থলোভী চিকিৎসকরা সরকারী হাসপাতালে এসব কোম্পানীর ঔষধ লিখে থাকেন। বর্হিরবিভাগসহ জরুরী বিভাবে এসব নিন্মমানের কোম্পানির রি-প্রেজেন্টটেটিভরা গভীর রাত পর্যন্ত বিচরণ করে থাকে সরকারী হাসপাতালে।

ভুক্তভোগী সাইদুর জানান, তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসার জন্য খানপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক ঔষধ লেখার পর বাহিরে আসলে তাকে ঘিরে ধরেন অনেক রি-প্রেজেন্টটেটিভরা। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা হাত থেকে টিকেট নিয়ে কারাকারি শুরু করে।  চিকিৎসক দ্রুত ঔষধ আনতে বললেও এদের কারনে বাধাগ্রস্ত হন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ ব্যপারে জেলা সিভিল সার্জনের সাথে তার মুঠোফোনে ব্যবহৃত নাম্বারটিতে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মোতালিব মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিনই তিন থেকে চারবার হাসপাতালে রাউন্ড দিচ্ছি। ইতোমধ্যে রোগীদের বিড়ম্বনা কমিয়ে আনতে কযেকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে এধরনের অভিযোগ থাকবেনা বলে আমি আশা করি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট জেলারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. আসাদুজ্জামান জানান, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, ইতোমধ্যেই একজন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দালাল ও রিপ্রেজেন্টেটিভ যেন ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

add-content

আরও খবর

পঠিত