শিশুদের নৈতিক শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে শুভ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) :  বিনামূল্যে সমাজের দরিদ্র, ছিন্নমূল-অবহেলিত ও শিশু-কিশোরদের মাঝে নৈতিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রম এক পাঠশালা। সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয় নামে পরিচিত। অস্থায়ী পাঠশালার উদ্যোগতা ও পাঠদানকারী শুভ চন্দ্র দাস নামের একজন তরুণ।

তরুণ ছেলে শুভ শহরের চাষাঢ়ার রেল স্টেশনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিনের মতো বেলা ৩টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত ও শপথ বাক্য পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে তার বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়ের মোট ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ৭০ জন। বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনী থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত বাংলা, অংক, ইংরেজী সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার প্রদান করা হয়।

যেখানে সমাজের ছিন্নমূল, দরিদ ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠদান করা হয়। এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে তরুণ ছেলে শুভ নিজ ব্যাক্তিগত খরচে বই, খাতা-কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণও দিয়ে যাচ্ছে।

অস্থায়ী পাঠশালার উদ্যোগতা ও পাঠদানকারী শুভ চন্দ্র দাস নারায়ণগঞ্জ বার্তার প্রতিবেদক কে বলেন, আমার পরিবারে দুই ভাই ও এক বোন ছাড়া আর কেউ নেই। মা-বাবাও নেই। আমার ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে শিক্ষক হবো। কিন্তু অভাবের তাড়নায় বেশীদিন লেখাপড়া চালাতে পারিনি। সর্বশেষ অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত বার একাডেমী স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়। তবে সবসময়ই চিন্তা করতাম নিজে একটা বিদ্যালয় করবো। আর এই বিদ্যালয়ে ছিন্নমূল পথ শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দিবো। আমি নিজেও একটি গরীব ঘরের সন্তান। তবে আমি আমার সামর্থের মধ্যে যতটুকু সম্ভব এই শিশুদের জন্য কাজ করছি। কিন্তু আপনাদের মত অন্যান্য মানুষগুলো যদি এগিয়ে আসে তাহলে তাদের জন্য একটি স্থায়ী পাঠশালা করতে চাই। যেখানে তাদের কষ্ট হবে না।

আগ্রহের সাথে শুভ আরও বলেন, আমার মতো বাকি সমাজের দরিদ্র, ছিন্নমূল-অবহেলিত ও শিশু-কিশোররা যেন লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত না হয় সেই চিন্তা করে বিনামূল্য শিশুদের লেখাপড়া করিয়ে থাকি। আমি একটি ফার্নিচারের দোকানে সকাল ৮ থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত কাজ করি। আগে আমার বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা তবে স্কুলের শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে বেলা ৩ টা বাজে ছুটি নিয়ে বিদ্যালয়ে চলে আসি তাই বর্তমানে আমার ৮ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ বার্তার প্রতিবেদক কে নাম প্রকাশ্যের শর্তে লাল সবুজের পতাকা শ্রী শুভ চন্দ্র প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী। এখানে সেই ভালো ভাবেই লেখাপড়া করছে। আমরা তো গরীব মানুষ তাই খুবই ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য আমরা নেই। তাই আমার মেয়েকে লেখাপড়ার জন্য এই বিদ্যালয়ে পাঠাই।

শুভ চন্দ্র দাস বলেন, চাষাড়া রেলস্টেশন ও বিভিন্ন এলাকার পথ শিশুদের মানবিক শিক্ষায় বিস্তারের লক্ষ্যে শিশুদের বই, খাতা-কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করার জন্য নিজের মাসিক আয়ের ৮ হাজার টাকা মোট ৫০% খরচ করা হয়।

তাছাড়া স্কুল, কলেজের বড় ভাইয়েরাও মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করে থাকে। দুই বছর আগে রোটার ক্লাব অব নারায়ণগঞ্জ, শীতলক্ষ্যা খাতা, কলম দিয়ে সহযোগিতা করে ছিলো। ইস্কুলটির এই মাসের ১১ তারিখ ৬ বছর পূর্ণ হবে তাই ছোট করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের ব্যবস্থা করবো। তার জন্য দোকান মালিক থেকে অগ্রীম ১ মাসের বেতন নিয়েছি। সেই অনুষ্ঠানে ১৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শারমীন হাবীব বিন্নি আপা, এ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার মালা আপা ও মাননীয় এমপি শামীম ওসমান স্যারের বরাবর আমন্ত্রণ কার্ড পাঠিয়েছি।

add-content

আরও খবর

পঠিত