মা-ছেলের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মা ও তার শিশু সন্তানকে হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে উজান গোবিন্দী এলাকাবাসী। ১৩ জুলাই বুধবার বেলা ১১টার দিকে আড়াইহাজারের ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দী পশ্চিমপাড়া এলাকায় হত্যাকান্ডের শিকার রাজিয়া সুলতানা কাকলীর বাড়ির পাশে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে গ্রেফতার হওয়া সাদেকুর সাদীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে কাকলীর চাচা শ্বশুর সাইফউদ্দিন কাজী সালফু তার বক্তব্যে বলেন, গ্রেফতারকৃত সাদিকুরের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। সে এলাকায় সব সময় জুয়া খেলে। সে একজন খারাপ প্রকৃতির ব্যক্তি ছিল। সে রাজিয়া সুলতানা কাকলী ও তার সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

এসময় স্কুল শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, তালহা মনোহরদী মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। প্রতিটি পরীক্ষায় সে ভালো রেজান্ট করতো। তার স্মৃতি মনে করে প্রতিদিন অন্যান্য শিক্ষকরাও চোখের পানি ফেলেন। এসময় তিনি তালহা ও তার মায়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করেন।

স্থানীয় নার্গিস আক্তার বলেন, আমিও একজন মা। আমারও সন্তান রয়েছে। আমি বুঝি সন্তান হারানোর ব্যধনা। তালহা প্রতিদিন আমার ছেলের সঙ্গে খেলাধুলা করতো। তাকে আমি অনেক আদর করতাম। আজ সে নেই এটা মেনে নিতে পারছি না। ঘুমন্ত তালহাকে নৃসংশভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এটা ভাবতেই দেহ শিউরে উঠে। আমি হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি। এদিকে তালহার নানী মামলার বাদী তাসলিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ে ও তার সন্তানকে হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।

প্রসঙ্গত, গত ২ জুলাই শনিবার রাতে কাকুলির ঘরের দরজা খুলতে বলে সাদিকুর। রাজিয়া সুলতানা দরজা খুললে ভেতরে গিয়ে দেখতে পায় তার ছেলে তালহাকে ভাত খাওয়াচ্ছে। ভাত খাওয়ানোর পর তালহা ঘুমিয়ে যায়। এর পর সাদিকুর রাজিয়া সুলতানাকে আরেক রুমে ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকা ধার চান। এক পর্যায়ে রাজিয়া সুলতানার কাকলীর পায়ে ধরে অনুরোধ করেন।

এলাকার ভালো ছেলে হিসেবে পরিরিচিত হওয়া সাদিকুরকে বিশ্বাস করে আলমারী খুলে রাজিয়া সুলতানা দেখান। এ সময় রাজিয়া সুলতানা বলেন তার কাছে দেওয়ার মতো কোন টাকা নাই। তার কাছে মাত্র ১০০ টাকা আছে। আলমারী খুললে সাদিকুর দেখতে পায় সেখানে কিছু স্বর্ণালঙ্কার রাখা রয়েছে। এর পর সাদিকুর তার ভাবি রাজিয়া সুলতানাকে পাশেই চেয়ারে বসতে বলেন।

তখন ওড়না দিয়ে রাজিয়া সুলতানার গলা পেঁচিয়ে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এর পর ইস্ত্রি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘরে বটি দিয়ে গলা কেটে দেয় সাদিকুর। তখন সাদি ভাবে রাজিয়া সুলতানার ছেলেও হয়তো তাকে দেখে চিনে ফেলেছে। তাই ঘুমন্ত শিশু তালহাকেও গলা কেটে হত্যা করেন সাদিকুর। এরপর রাজিয়া সুলতানার আলমারী থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চলে যায়।

এর আগে গত ৯ জুলাই শুক্রবার আসামী সাদিকুরকে আড়াইহাজারের তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। আসামী সাদিকুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পিবিআই। ১১ জুলাই সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। এদিকে রাজিয়া সুলতানার আলমারী থেকে স্বর্ণালঙ্কারের কিছু সাদিকুর ঘর এবং যাদের কাছে বিক্রি করেছে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে পিবিআই।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই জানান, গত ২ জুলাই শনিবার প্রধান আসামী সাদিকুর আইপিএলের জুয়ার টাকা জোগাড় করতে এবং স্বর্ণালঙ্কারের লোভে রাজিয়া সুলতানা ও তার শিশু সন্তান তালহাকে বটি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে।

add-content

আরও খবর

পঠিত