নারায়ণগঞ্জের হকার নেতা আসাদের খুঁটির জোর কোথায়

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নিজেকে হকার নেতা বলে দাবি করলেও নারায়ণগঞ্জ শহরে চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ। এক সময় হকারি করা আসাদ প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে বনে গেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা হকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রের উপর হামলা, প্রকাশ্যে তরুণ হকারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, পুলিশের উপর হামলা, সড়কে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তিনটি মামলার আসামি সে। দুইটি মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রেও আসামির তালিকায় রয়েছে আসাদের নাম। তবুও শহরের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা হকারদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে নিয়মিত চাঁদা তোলে সে। তরুণ হকার হত্যাসহ তিনটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি এখনও কীভাবে চাঁদাবাজি এবং ফুটপাতে বসার আবদার জানিয়ে বেড়ায় সেই প্রশ্ন নগরবাসীর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম। কয়েকবছর আগেও সড়কের ফুটপাতে হকারি করতো। একসময় প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে হকারদের নেতা বনে যায়। ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের ফুটপাত হকারমুক্ত করার যৌথ উদ্যোগের বিরোধীতা করে আন্দোলন করা নেতাদের অগ্রভাগে ছিল আসাদও। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি এই হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আইভী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

ওই ঘটনায় সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে সিটি মেয়রের পক্ষে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রের ১২ আসামির মধ্যে মহানগর হকার্সলীগের সভাপতি রহিম মুন্সিসহ আসাদের নামও রয়েছে।

এরপর ২০২১ সালের ৯ মার্চ ফুটপাতে বসার দাবিতে বিক্ষোভ করে হকাররা। ওই সময় হকারদের নেতৃত্ব দেয় আসাদ। ওইদিন বিকেলে সড়কে আগুন দিয়ে যানবাহনে ভাঙচুর চালায় হকাররা। বাধা দিলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা, যানবাহন ভাঙচুর ও সড়কে আগুন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় আসাদ। পরদিন পুলিশের এক মামলায় আসাদসহ ২৫০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাকে।

একই বছরের ১৪ অক্টোবর ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে তর্কের জেরে খুন হন ১৮ বছর বয়সী তরুণ জোবায়ের হোসেন। ওই তরুণও ফুটপাতে হকারি করতো। তাকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। ওই হত্যা মামলারও আসামি এই আসাদ। মামলাটির অভিযোগপত্রেও রয়েছে তার নাম।

হত্যা মামলাটিতে জেলেও যায় আসাদ। জামিনে বেরিয়ে এসে নিহত জুবায়েরের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বেগম এই ঘটনায় থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসা কয়েকজন হকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিজেকে হকার নেতা বলে পরিচয় দেওয়া আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ মূলত চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। এই সড়কের ফুটপাতে বসতে হলে আসাদকে দৈনিক চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার একটি অংশ সখ্যতা বজায় রাখা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয় আসাদ। হত্যা, সিটি মেয়র ও পুলিশের উপর হামলার মামলার আসামি আসাদ একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও শহরে তার বিচরণে রয়েছে বেপরোয়া ভাব।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে সিটি মেয়র ও দুই সংসদ সদস্য ‘শহরকে হকার ও যানজটমুক্ত’ করতে ঐক্যমতে পৌঁছান। এরপরই অ্যাকশনে যায় পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়ক, শায়েস্তা খাঁ সড়ক, মীর জুমলাসহ কয়েকটি সড়ক থেকে হকার ও অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ফুটপাত হকারমুক্ত করার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও বেপরোয়া আসাদ তাঁর লোকজনকে নিয়ে ‘অবৈধ আবদার’ জানিয়ে গত রোববার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দ্বারস্থ হয়। তারা আবারও ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা করে দিতে শামীম ওসমানের কাছে আবদার করে। এই সময় সংসদ সদস্যের পাশে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শামীম ওসমান তাদের জানিয়ে দেন, শহরের সকল ফুটপাতই হকারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু সড়কের কয়েকটি স্থানে খন্ড খন্ডভাবে কয়েকজন হকারকে বসতে দেখা গেছে। এই হকাররা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে থাকেন আসাদকে। আসাদের প্রভাবে তারা এখনও সড়কের ফুটপাত দখলে রাখার পাঁয়তারা করছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত