খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শুভ বড়দিন আজ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন আজ ২৫ ডিসেম্বর। খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্ট আজকের দিনে বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশু খ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন।

সারা বিশ্বের খ্রিষ্টানদের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্ট ধর্মের মানুষেরাও ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে আজকের দিনটি উদ্‌যাপন করবেন। গত বছর বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে উৎসব উদ্‌যাপন হয়েছিল সীমিত পরিসরে এবং অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে। এখন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকায় বড়দিনের আয়োজনে চাকচিক্য বাড়বে।

এবার এ উৎসব উদযাপনে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে সারাদেশের গীর্জাগুলো। এছাড়া নানা প্রস্তুতি নিয়েছে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলগুলো। রঙিন ক্রিসমাস ট্রি, জিঞ্জার ব্রেড হাউজ, বড়দিনের কেকসহ রয়েছে বর্ণিল সাজসজ্জা ও জমকালো নানা আয়োজন। বড় দিন ‍উপলক্ষে আজ রবিবার সরকারি ছুটি। সরকারি-বেসরকারি রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্রগুলো এ দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও প্রকাশনার মাধ্যমে দিনটির তাত্পর্য তুলে ধরবে।

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, যিশুর জন্ম হয়েছিল জীর্ণ গোয়ালঘরে। সেই বিশ্বাস থেকেই গির্জায় প্রতীকী গোয়ালঘর তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রতীকীভাবে শিশু যিশু ও তাঁর মাতা মেরিসহ অন্যদের তুলে ধরা হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মযাজকেরা বলেছেন, নামে বড়দিন হলেও আক্ষরিক অর্থে এ দিনটি বড় নয়। এদিনে খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা যাতে মন ও হৃদয়ে বড় এবং উদার হতে পারে, তাই যিশু খ্রিষ্টের এ জন্মোৎসবকে বড়দিন বলা হয়। আজ রবিবার বড়দিন হলেও বিভিন্ন গির্জায় উৎসব উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে শনিবার সন্ধ্যার প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পর থেকেই।

অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে আজ তৈরি হবে বড়দিনের বিশেষ কেক। এছাড়া থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি থাকবে।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা দেশের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান।

বড়দিন উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, খ্রিস্ট ধর্মানুসারে যিশু খ্রিস্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত ও আলোর দিশারি। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে তিনি বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও শান্তির বাণী প্রচার করেন। তিনি পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আসার আহ্বান জানান। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি, ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা দেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমি একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। সব শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিস্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।

এদিকে বড়দিনের উৎসব ঘিরে দেশের সব গির্জার পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা থাকবে পুলিশ, র‍্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে চার্চগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সতর্ক থাকবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত