খানুপর ৫শত শয্যায় উন্নীতসহ হবে সম্পূর্ন নতুন মেডিক্যাল কলেজ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজেস্ব প্রতিনিধি ) : শহরের খানপুর ৩শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে সম্পূর্ন আধুনিকায়ন করে ৫’শ শয্যায় উন্নীত করা সহ সম্পূর্ন নতুন ভাবে আরো একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। শনিবার ১৯ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের হাসপাতাল পরির্দশন শেষে জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির ৬ষ্ঠ মাসিক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

গত ১৫ নভেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাথে নারায়ণগঞ্জের দুটি হাসপাতালের উন্নয়ন প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিনিধি দলটি শনিবার হাসপাতাল দুটি পরিদর্শনে আসেন।
পরিদর্শন প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহম্মেদ, অতিরিক্ত সচিব নাসির আরিফ মাহমুদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ, উপ পরিচালক ডাক্তার আবুল হোসেন সহ অন্যান্য কর্মকর্তা।

জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে সভায় ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্ববধায়ক ডাক্তার নিতীশ কান্তি দেবনাথ ও হাসপাতালের গাইনী বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম প্রতিনিধি দলের কাছে হাসপাতালের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। যার মধ্যে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক স্বল্পতা, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, জায়গা সংকুলন সহ নানা দিক তুলে ধরেন। মূলত কাগজে কলমে হাসপাতালটি ৩০০ শয্যা হাসপাতাল বলা হলেও এখানে ২’শ হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তাদের সীমাবদ্ধতার কারনে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা উল্লেখ করেন।

জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া নারায়নগঞ্জের সার্বিক অবস্থান তুলে ধরে উল্লেখ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য জেলা গুলোতে আরো ছোট পরিসরে মেডিক্যাল কলেজ হলেও নারায়ণগঞ্জের মত একটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে মেডিক্যাল কলেজ না থাকাটা অত্যন্ত দু:খজনক উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জে একটি আধুনিক মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কথা বলেন।

জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, সরকারের কাছে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য আর্ন্তজাতিক ভাবে যে এসও রয়েছে সেই এসও অনুযায়ী আমাদের ৩ শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সুবিধাদি নিশ্চিত করা হোক। এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আশিতোষ দাস শহরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকেও আধুনিকায়ন করার দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রতিনিধি দলের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্প এলাকা। এখানে ছোট বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকেরা সব সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্প নগরী হলেও এই জেলার হাসপাতালে একটি বার্ণ ইউনিট নেই।  কোন মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আগুনে পোড়া ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া রোগী ঢাকায় যেতে যেতে রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা যায়। এভাবে রাস্তায় নারায়ণগঞ্জের হাজারো মানুষের জীবন গিয়েছে। তাই তিনি জরুরি ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ ৩শত বিশিষ্ট হাসপাতালে বার্ণ ইউনিট, হার্ট সেন্টার, কিডনি বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, সিসিইও এবং আইসিও চালু করা সহ রোগীদের আধুনিক সেবা প্রদান করা সহ খানপুর ৩শত শয্যা হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করার সুপারিশ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাদের বক্তব্যে খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং ১ শত শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় যে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সংগঠিত হয়েছে তার ভূয়সি প্রংশসা করে বলেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ যদি নিজ উদ্যোগে এতো উন্নয়ন করতে পারে হাসপাতালের জন্য তাহলে আমাদেরও হাসপাতালের জন্য অনেক কিছু করার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা হাসপাতালটির উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ সহ নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা কামনা করেন। সেই সাথে তারা বলেন হাসপাতালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর যে সংকুলান রয়েছে তা ইচ্ছা করে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবস্থা করার সুযোগ রয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান হাসপাতালে বেসরকারীভাবে প্রয়োজন সংখ্যক ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে জনগনের সেবা প্রদান আরো জোরদার করার লক্ষ্যে কর্মচারীদের ব্যয় বহনের জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলকে অনুরোধ করেন। প্রতিনিধি দলের পরামর্শ অনুযায়ী কর্মচারীদের ব্যয় বাবদ প্রতিমাসে ৩ লাখ টাকা করে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে অনুদান প্রদানের এবং সেটা আগামী ২ বছর পর্যন্ত চেম্বার অব কর্মাস বহন করার অনুরোধ করেন।

প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যেহেতু নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্প এলাকায় এবং এখানে অন্যান্য জেলার তুলনায় শ্রমিকেরা বেশি স্বাস্থ্য ঝঁকিতে থাকে তাই খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে সম্পূর্ন আধুনিকায়ন করা হবে এবং এটা ৫’শ শয্যায় উন্নীত করা হবে। হাসপাতালটিকে ৫’শ শয্যা উন্নীত করতে বর্হিবিভাগের ভবনটি আরো একতলা উপরের দিকে বর্ধিত এবং হাসপাতালের উত্তর দিকে একটি এক তলা ভবনকে ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে ৫’শ শয্যা উন্নীত করনের কথা বলেন। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ বাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা অনুযায়ী সম্পূর্ন নতুন ভাবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জমা দেওয়ার অনুরোধ করেন।

প্রতিনিধি দলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া রয়েছে শ্রম অধিদপ্তরে । যদি খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য বিশেষ গুরুত্ব ও সুযোগ প্রদান করা হয় তাহলে আমাদের বিকেএমইএ এর পক্ষ থেকে ঘোষণাকৃত ওই অর্থ আমরা খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনুদান হিসেবে প্রদান করবো শ্রমিকদের উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রৌকশলী মাহবুবুল আলম। আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) গাউছুল আজম, বিকেএমইএ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল হক, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাক্তার শাহনেওয়াজ চৌধুরী সহ জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির ৬ষ্ঠ মাসিক সভা শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি দল সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে শহরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা হাসপাতালে বর্হিবিভাগ, জরুরি বিভাগ সহ অপারেশন থিয়েটার ঘুরে দেখেন।

প্রসঙ্গত, খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের উন্নয়নে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল এবং ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় ২টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স, ৮৫টি বৈদ্যুতিক পাখা, সার্বিক নিরাপত্তায় ৬৩টি সিসি টিভি ক্যামেরা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে অচল জেনারেটর সচল, বিশুদ্ধ খাবার পানির নিজ ডিপটিউবওয়েল, সম্মেলন কক্ষ আধুনিকায়ন, ডাক্তারদের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পন্ন করেছেন।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত