কাল থেকে লাঙ্গলবন্দে ধর্মীয় পবিত্র অষ্টমী স্নান উৎসব

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : হিন্দু সম্প্রদায়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাপমোচনে পূণ্যা স্নানের এক তীর্থ ভূমি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলা মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপূত্র নদে লাঙ্গলবন্দে আজ ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখ আদি ব্রহ্মপূত্র নদে স্নানোৎসব শুরু। শুল্কা তিথি অনুযায়ী বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় লগ্ন শুরু। শেষ হবে বৃহস্পতিবার রাত ১টায়।

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেষে লাঙ্গলবন্দ ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আদি ব্রহ্মপূত্র নদে যুগ যুগ ধরে এ স্নান উৎসব চলে আসছে। গত বছরের তুলানায় এ বছর পহেলা বৈশাখ হালখাতা দিন হওয়াতে পূণ্যার্থীদের সমাগম কম ঘটবে বলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন মনে করেন। গত বছর স্নানোৎসবে পদদলিত হয়ে ১০ পূণ্যার্থীর প্রাণ হানি ও ৩০ জন আহতের ঘটনায় এ বছর পূণ্যার্থীদের আগমন উপলক্ষে ইতি মধ্যে জেলা প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদারে সকল পরিস্থিতি সম্পন্ন করেছেন। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও  মিনারা নাজনীন জানান, জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় সরকারি অর্থয়ানে ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরি পানা পরিস্কার, পূণ্যার্থীদের কাপড় পাল্টানোর জন্য প্রত্যেক স্নানঘাটের সামনে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমান শৌচাগার, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, শিশু খাদ্য ও ঔষধ প্রদান করা হবে।

নানোৎসবে পূণ্যার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তায় ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিট্রেট দায়িত্বে থাকবেন। এক বছর ধরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় স্নান এলাকা থেকে ২০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সহ পূণ্যার্থীদের সুুবিধার্থে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. মহিদউদ্দিন খন্দকার জানান, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উপলক্ষে স্নান উদযাপন পরিষদ, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন হিন্দ ধর্মাবলম্বীদের সেবা সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, বিশ্বাস কীর্তন, প্রার্থনা ও পূণ্যার্থীদের সেবা চিকিৎসা সোবসহ বিভিন্ কর্মসূচী পালন করবে। আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব-পুলিশ, আর্ম ব্যাটালিয়ান পুলিশ, আনসারসহ ১০০০ পুলিশ সদস্য সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা হয়েছে। এক হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে স্নান ঘাটের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ভাবে টহলে থাকবে। এছাড়াও  পুরো স্নান এলাকায় নিয়ন্ত্রন রাখতে ৬ টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিপুল সংখক সাদা পোশাকদারী পুলিশের কয়েকটি টিমের পাশাপাশি ১৬১ জন আর্ম ব্যাটালিয়ান পুলিশ সদস্যরা  টহলে থাকবেন।

কথিত আছে, ব্রহ্মপূত্র জলে পাপমুক্ত করেছিল পরশুরাম মনিকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন মনে করেন, মহাভারতের বর্ণনা মতে পরশুরাম মনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপূত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান করেছিলেন, তা সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত।  সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এসময়ে ব্রহ্মপূত্র নদে স্নান খুবই পূণ্যের। এ স্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। এ বিশ্বাস নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে এ স্নানে অংশ নেওয়ার জন্য উপমহাদেশের এবং দেশের  বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন লাঙ্গলবন্দে। পাপস্খলনের এই উৎসবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাখো লাখো মানুষ এসে এখানে সমাবেত হয়। পরশুরামের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার কথা স্মরণ করে শ’শ’ বছর ধরে লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপত্র নদে অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত