কাঞ্চন পৌরসভায় শঙ্কার ভোট বুধবার, কঠোর প্রস্তুতি প্রশাসনের

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ২৬ জুন৷আজ সকাল আটটা থেকে বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ৷ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ১৯টি কেন্দ্রে ভোট দিবেন ভোটাররা। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, ব়্যাব, বিজিবি সদস্য মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন৷ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে কমিশন ও স্থানী প্রশাসন নির্বাচনী এলাকায় কড়া নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ৷

এদিকে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্রভাবশালী মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ভোটের দিন এ নিয়ে সহিংসতারও সম্ভবনা রয়েছে৷
তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচনী এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে জেলা পুলিশ৷ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় মোট ৪৪৬ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ১৩ জন৷ এছাড়া একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন নির্বাচনী এলাকায়৷ এছাড়া দুই প্ল্যাটুন বিজিবি এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ব়্যাব সদস্যও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন৷

গত সোমবার রাত ১২টার পর থেকে সবধরনের প্রচারণা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন দুই মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর পদ প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন সদ্য সাবেক মেয়র ‘জগ’ প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও সাবেক মেয়র ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীকের দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা। রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভাটি পূর্বে কাঞ্চন ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। ইউপি থেকে পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর প্রথমবারের নির্বাচনে দেওয়ান আবুল বাশার মেয়র পদে জয়ী হন। এর আগেও তিনি কাঞ্চন ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। এক সময়ের বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা আবুল বাশারের রাজনীতির শুরুটা আওয়ামী লীগের সাথে। পরবর্তীতে বিএনপির সাথে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘ বছর যাবৎ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটিকে বিদায় জানিয়ে আবারও যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়াও কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী তাকে সমর্থন দিচ্ছে।

গত কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী হন রফিকুল ইসলাম। গত ৫ বছরে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় কর্মকাণ্ডের কারণেই আলোচিত ছিলেন রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ রয়েছে। মামলাও রয়েছে কয়েকটি। তবে, মেয়র পদে থাকাকালীন বিগত সময়ে স্থানীয়ভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নও করেছেন তিনি। এদিকে, দুই প্রার্থীই ভোটারদের প্রভাবিত এবং আতঙ্কিত করতে ‘বহিরাগতদের’ দিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী রাতভর এলাকায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে, যা ভোটারদের আতঙ্কিত করে তুলছে। দুই প্রার্থীই একই বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন।

গত রোববার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আবুল বাশার অভিযোগ করেন, আমাদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা (প্রতিদ্বন্দ্বী) বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র জোগার করে নির্বাচনী এলাকায় রাতের বেলায় মাইক্রো দিয়ে মহড়া দিচ্ছে, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আগামী ২৬ জুনের নির্বাচনে ভোটাররা যেন সেন্টারে (ভোটকেন্দ্র) না যায় সেজন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় রাত একটা-দুইটার পর থেকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

এদিকে, রফিকুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে৷ হত্যা মামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে মোবাইল প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে৷ আমি কমিশনে একটি তালিকা দিয়েছি৷ আশা করি প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তো মূল প্রার্থী না, মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন৷ এসব কারণে তারা আমাকে দমাতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছে, যোগ করেন তিনি।

তবে, নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে এ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে৷ ভোটের দিন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে৷ নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর রাখতে স্থানীয় প্রশাসনসহ নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে৷ ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে কাঞ্চন পৌরসভার ১৯টি ভোট কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৭৯৮ জন ভোটার ভোট দিবেন৷ এ নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী, ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত