কাঞ্চন পৌরসভায় মেয়র পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস, এগিয়ে রফিক

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৬ জুন। নিয়ম অনুযায়ী সোমবার রাত ১২টার পর থেকে সবধরনের প্রচারণা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত দুই মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর পদ প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন জগ প্রতীকের প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম ও মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা। বাদশাও কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র ছিলেন। দুই প্রার্থীর অবস্থান ভোটের মাঠে শক্ত হলেও এবারের নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের দিক থেকে এগিয়ে আছেন রফিকুল ইসলাম।

রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভাটি পূর্বে কাঞ্চন ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। ইউপি থেকে পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর প্রথমবারের নির্বাচনে দেওয়ান আবুল বাশার মেয়র পদে জয়ী হন। এর আগেও তিনি কাঞ্চন ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। এক সময়ের বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা আবুল বাশারের রাজনীতির শুরুটা আওয়ামী লীগের সাথে। পরবর্তীতে বিএনপির সাথে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘ বছর যাবৎ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটিকে বিদায় জানিয়ে আবারও যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়াও কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী তাকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে, স্থানীয় ভোটাররা এই বিষয়েটিকেই উল্টো চোখে দেখছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভোটাররা ঝুঁকছেন রফিকুল ইসলামের দিকে।

গত কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী হন রফিকুল ইসলাম। গত ৫ বছরে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় কর্মকাণ্ডের কারণেই আলোচিত ছিলেন রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ রয়েছে। মামলাও রয়েছে কয়েকটি। তবে, মেয়র পদে থাকাকালীন বিগত সময়ে স্থানীয়ভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নও করেছেন তিনি। যা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছাপিয়ে স্থানীয় ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া, রাজনৈতিকভাবে রফিকুল ইসলামের অবস্থান বেশ শক্ত। তার পারিবারিক অবস্থানও ভালো। যা তাকে ভোটের মাঠে এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।

স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে রফিকুল ইসলাম রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। এলাকায়ও ছিল তার সরব উপস্থিতি। অন্যদিকে, আবুল বাশার বাদশা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও আলোচনার বাইরে ছিলেন দীর্ঘদিন। সর্বশেষ, তাকে বিএনপি দল থেকে বহিষ্কার করলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আবারও সম্পৃক্ত হন। তবে কাঞ্চনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তাকে কাছে পায়নি স্থানীয়রা। এই সমীকরণে পিছিয়ে পড়েছেন আবুল বাশার। তবে, তার পক্ষে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি সাংসদের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী গোলাম মূর্তজা পাপ্পা নিজেও আবুল বাশারের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সংসদ সদস্যের সমর্থন পাওয়ায় তার প্রতিপক্ষ অংশটির সমর্থন আবার পাচ্ছেন রফিকুল।

তাছাড়া, সংসদ সদস্যের অনুসারী একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সংসদ সদস্য সমর্থন পান আবুল বাশার বাদশা। সাংসদের পছন্দের বাইরে গিয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতারা প্রার্থী না হলেও তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়ে গেছে। যা ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে, দুই প্রার্থীই ভোটারদের প্রভাবিত এবং আতঙ্কিত করতে ‘বহিরাগতদের’ দিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী রাতভর এলাকায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে, যা ভোটারদের আতঙ্কিত করে তুলছে। দুই প্রার্থীই একই বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন।

গত রোববার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আবুল বাশার অভিযোগ করেন, আমাদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা (প্রতিদ্বন্দ্বী) বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র জোগার করে নির্বাচনী এলাকায় রাতের বেলায় মাইক্রো দিয়ে মহড়া দিচ্ছে, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আগামী ২৬ জুনের নির্বাচনে ভোটাররা যেন সেন্টারে (ভোটকেন্দ্র) না যায় সেজন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় রাত একটা-দুইটার পর থেকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী করতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান এ মেয়র প্রার্থী।

এদিকে, রফিকুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে৷ হত্যা মামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে মোবাইল প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে৷ আমি কমিশনে একটি তালিকা দিয়েছি৷ আশা করি প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে৷ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তো মূল প্রার্থী না, মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন৷ এসব কারণে তারা আমাকে দমাতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছে, যোগ করেন তিনি৷

তবে, নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে এ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেয়েছি৷ এ ব্যাপারে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর রাখতে স্থানীয় প্রশাসনসহ নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে৷ ভোটের দিন পর্যাপ্ত পুলিশ, ব়্যাব, বিজিবিসহ ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্বে থাকবেন৷ ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আগামী ২৬ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে কাঞ্চন পৌরসভার ১৯টি ভোট কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৭৯৮ জন ভোটার ভোট দিবেন। এ নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী, ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত