অসুস্থ বাবা‌কে ট্রেনিং‌য়ের কথা ব‌লে ৭৫‌ দিন কারাবাসে ছি‌লেন সাংবা‌দিক পুত্র

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে (আইসিটি অ্যাক্ট- ৫৭) মামলায় ৭৫ দিন পর নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন এর কারাবাসের বিষয় জানলেন তারই বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সৈয়দ লুৎফর রহমান। তবে বড় ছেলে লিংকন টানা ৭৫ দিন কোথায় ছিলো এই বিষয় কিছুই জানতে না সেই অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা। জানা যায়, লুৎফর রহমান দীর্ঘ দিন অসুস্থ হয়ে বাড়িতে শয্যা অবস্থায় রয়েছে। অসুস্থ কথা চিন্তা করে সাংবাদিক লিংকনের নির্দেশ মত গ্রেফতার বা কারাগারের বিষয়ই জানায়নি তার ছোট ভাই রিফাত। এছাড়া বাসায় কেউ আসলে পিতাকে লিংকনের বিষয়টি না জানায় তাই সকলকে বিষয়টি অবগতি করেন তার ছোট ভাই। তবে প্রতিনিয়ত সন্তান লিংকনের বিষয় জানতে চাইলে ছোট ভাই রিফাত তার অসুস্থ বাবাকে সাংবাদিক লিংকন কর্মরত আনন্দ টেলিভিশন এর কাজে জেলার বাইরে ট্রেনিং গেছে বলে রাখতো।

এদিকে, লিংকনের ছোট ভাই সৈয়দ রিফাত আল রহমান তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে এক আবেগময় অনুভূতি প্রকাশ করেন সেটি সংবাদ মাধ্যম নারায়ণগঞ্জ বার্তা ডট কম এর পাঠকদের জন্য নিচে হুবাহু তুলে ধরা হলো :

দীর্ঘ ৭৫ দিন ৭৪ রাত কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে এক মাত্র পুত্র সন্তানকে কাছে পাওয়ার পর বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে সাংবাদিক লিংকন ভাই। এসময় দুই চোখে বেয়ে অজস্র অশ্রু ঝড়তে দেখা যায়।

এছাড়া দীর্ঘ দিন কারাবাসের পর হঠাৎ প্রিয় বড় ছেলে লিংকন ভাইকে বাড়িতে উপস্থিত দেখতে পেয়ে চমকিয়ে উঠে অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা সৈয়দ লুৎফর রহমান। লিংকন ভাই কারাগারে ছিলো না জানায় এসময় বাবা প্রিয় সন্তান লিংকন ভাই এতো দিন কোথায় ছিলো বলাতে লিংকন ভাই বলে উঠে কারাগারে ছিলাম, জেলে ভিতরে এতো দিন ছিলাম  লিংকন ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে বাবার দুই চোখে বেয়ে অজস্র অশ্রু ঝড়ে পড়ে। লিংকন ভাই কারাগারে ছিলো বাবা না জানায় এসময় সকল বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলা হয়।

এরআগে ২রা ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকাল ৫টার দিকে সাংবাদিক লিংকন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। ওই সময় লিংকন ভাইকে স্বাগত ও বরণ করে নিতে জেলা কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, পরিবাররের সদস্যরা, সাংবাদিক-সহকর্মী, বন্ধু-মহল, আত্মীয়-স্বজন এবং শুভাকাঙ্খীগণ।

এরপর ২রা ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাংবাদিক লিংকনের জামিনে মুক্ত হওয়ার খবর শুনে শহরের আল্লামা ইকবাল (কলেজ রোড) রোডস্থ বাসায় দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন করোনা হিরো ও মানবিক সংগঠন টিম খোরশেদের লিডার এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এর ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এসময় লিংকনের অসুস্থ পিতা প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সৈয়দ লুৎফর রহমান এর শারিরীক অবস্থার খোঁজ খবর নেন খোরশেদ। এছাড়াও লুৎফর রহমানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি। ওই সময় পাশে ছিলো ছোট সন্তান সৈয়দ রিফাত আল রহমান এবং লিংকনের একমাত্র ছেলে সৈয়দ শারাফ আল মুন্তাকীম আযান।

এদিকে, এর আগে ঢাকার উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারক আবু জাফর সিদ্দিকীর বেঞ্চে তার জামিনের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে (সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে) গত ১লা ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার এক শুনানি শেষে এ জামিন মঞ্জুর করা হয়।

জানা গেছে, জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচার হয়। যে সুত্র ধরে ওই সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট ভাই আলী রেজা রিপন ২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে (আইসিটি অ্যাক্টে- ৫৭ ধারায়) নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ডটকম এর তৎকালিন নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ হাসান কচিকে ১ নং বিবাদী ও নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ডটকম এর প্রকাশক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকনকে ২ নং বিবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে। এছাড়াও দৈনিক ডান্ডিবার্তার সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদল এবং দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদকে একই মামলায় অভিযুক্ত করে পৃথক তিনটি মামলাতে বিবাদী করা হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯ নভেম্বর শুক্রবার মধ্যরাত ২টার দিকে শহরের আল্লামা ইকবাল রোডস্থ বাসা থেকে সাংবাদিক লিংকনকে ওয়ারেন্টে গ্রেফতার দেখিয়ে তুলে নেয় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তবে ওয়ারেন্টের আগে কোন নোটিশও পাইনি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগি সাংবাদিক।

উল্লেখ্য, সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন সরকার অনুমোদিত স্যাটেলাইট চ্যানেল আনন্দ টেলিভিশনের নাারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া দৈনিক সংবাদর্চচা পত্রিকায় বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। এদিকে ৫৭ ধারাকে কালো আইন বলে আখ্যায়িত করেছিলো সকল পেশাদার সাংবাদিকরা। এছাড়াও মামলাটি প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন সময়েই মানববন্ধন সহ আন্দোলন কর্মসূচী করেছেন জেলার সর্বস্তরের গণমাধ্যমগণ।

add-content

আরও খবর

পঠিত